মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য

মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য
মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য

নবী যুগ থেকেই মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য আছে। উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (উবাদা ও তাঁর পিতা) জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর মসজিদে ছিলেন এবং মাত্র একটি কাপড় গায়ে দিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। এটা দেখে আমি লোকদের ওপর দিয়ে একেবারে সামনে তাঁর ও কিবলার মাঝখানে গিয়ে বসলাম।


অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আপনি একটিমাত্র কাপড় পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশেই আপনার চাদর আছে। এ কথা শুনে তিনি আঙুলগুলো প্রশস্ত করে সেগুলো কামানের মতো বাঁকা করে আমার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে তোমার মতো কোনো নির্বোধ লোক আমার কাছে এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ করবে।

অতঃপর সেও অনুরূপ আচরণ করবে। শুনো, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘ইবনু ত্বাব’ নামের খেজুরগাছের একটি ডাল হাতে আমাদের এ মসজিদে এসেছেন এবং মসজিদের পশ্চিম দিকে কফ দেখতে পেয়ে তিনি ডাল দ্বারা ঘষে তা পরিষ্কার করলেন। এরপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, তোমাদের কে চায় যে আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? জাবির (রা.) বলেন, এতে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তারপর তিনি আবার বলেন, তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে আল্লাহ তাআলা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম, তৎপর আবার তিনি বলেন, তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন? জবাবে আমরা বললাম, না! হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করে না।

এরপর তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তাআলা তার মুখোমুখি থাকেন। সুতরাং মুসল্লি যেন সম্মুখের দিকে কিংবা ডান দিকে থুথু না ফেলে; বরং সে যেন বাঁ দিকে বাঁ পায়ের নিচে থুথু ফেলে আর যদি ত্বরিত কফ চলে আসে তবে সে যেন কাপড়ের ওপর এভাবে থুথু ফেলে এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের ওপর এভাবে গুটিয়ে নেয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার কাছে সুগন্ধি নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক দ্রুতগতিতে উঠে দৌড়িয়ে তার গৃহে গেল এবং হাতের তালুতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালের মাথায় মেখে কফের দাগ ছিল সেটাতে তা লাগিয়ে দিলেন।

জাবির (রা.) বলেন, এখান থেকেই তোমরা তোমাদের মসজিদে সুগন্ধি মাখতে শিখেছ।
(মুসলিম, হাদিস : ৭৪০৪)

আজ অবধি মসজিদে মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহারের ঐতিহ্য রয়েছে। বিশেষভাবে মসজিদুল হারাম ও পবিত্র কাবাঘরে প্রতিদিন ১০ বার উন্নত মানের সুগন্ধি ব্যবহার করছে সৌদির মসজিদ পরিচালনা পর্ষদ। বিশেষ উপলক্ষে পবিত্র রমজান মাস, হজ ও প্রতি শুক্রবারে মসজিদুল হারামে সুগন্ধি ও ধূপ ব্যবহার করা হয়।

জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ২০ মিনিটের মধ্যে সুগন্ধি ও ধূপায়নের প্রতি পর্বের কাজ সম্পন্ন হয়। কাবা প্রাঙ্গণের হাজরে ইসমাইল, আল-মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইয়ামানি, মাকামে ইবরাহিমসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক পবিত্র স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়।

সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে নববী ইসলামের দ্বিতীয় সম্মানিত স্থান। লক্ষাধিক মুসল্লির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদটি পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন ১১৫ টন জীবাণুমুক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এরপর তাতে ৩০ হাজার লিটার (৩০ টন) সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়।