ইবরাহিম (আ.)-এর ১০ বৈশিষ্ট্য

ইবরাহিম (আ.)-এর ১০ বৈশিষ্ট্য
ইবরাহিম (আ.)-এর ১০ বৈশিষ্ট্য

ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ২৫টি সুরায় ২০৪টি আয়াতে বর্ণনা রয়েছে। ইবরাহিম (আ.) ছিলেন নুহ (আ.)-এর ১১তম অধস্তন পুরুষ। উভয়ের মধ্যে প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল।

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)।

আল্লাহ তাঁর বংশধারা নবুয়তের জন্য নির্বাচিত করেছেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইবরাহিম (আ.)-এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো—১. আল্লাহর খলিল/বন্ধু : আল্লাহ কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-কে নিজের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ইবরাহিমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৫)

২. মানবজাতির মহান ইমাম : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারকে মানবজাতির নেতা (ইমাম) হিসেবে মনোনীত করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করছি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৪)৩. পবিত্র কাবার নির্মাতা : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে কাবাঘর নির্মাণের অনন্য মর্যাদা দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবাঘরের প্রাচীর তুলেছিল, তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৭)৪. পরিবারে নবী ও কিতাব দান : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধরকে নবুয়ত ও আসমানি কিতাবের জন্য মনোনীত করেছেন। তাঁর পরে আসা সব নবীই ছিলেন তাঁর বংশধর। আদম (আ.) থেকে ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত ১০-১২ জন নবী ছাড়া প্রায় সব নবীই ছিলেন ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধর। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহিমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুয়ত ও কিতাব। আর আমি তাকে পৃথিবীতে পুরস্কৃত করেছিলাম; আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে।

’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৭)৫. কিয়ামতের প্রথম কাপড় পরিধান : কিয়ামতের দিন ইবরাহিম (আ.)-কে প্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সবার আগে যাঁকে কাপড় পরানো হবে তিনি হবেন ইবরাহিম (আ.)। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৪৯)৬. নবী ও সিদ্দিক : মানবজাতির ভেতর সবচেয়ে বেশি মর্যাদা নবীদের। মর্যাদার বিচারে তাঁদের পরই সিদ্দিকদের অবস্থান। আল্লাহ কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-কে নবী ও সিদ্দিক উভয় গুণে গুণান্বিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, এই কিতাবে ইবরাহিমের কথা। সে ছিল সত্যনিষ্ঠ এক নবী।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৪১)

৭. মুসলিম জাতির পিতা : কোরআনে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের ধর্ম। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম এবং এই কিতাবেও। যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৮)

৮. হজের ঘোষক : পবিত্র হজের ঘোষণা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইবরাহিম (আ.)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে ইবরাহিম) আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে ও সব ধরনের ক্ষীণকায় উটের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৭)

৯. সব ধরনের পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ : ইবরাহিম (আ.)-এর গোটা জীবন ছিল পরীক্ষাময়। কিন্তু সব ধরনের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার রব কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। সেগুলো সে পরিপূর্ণ করেছিল…।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১২৪)

১০. তাঁর বংশে শেষ নবী ও বিশ্বনবীর আগমন : ইবরাহিম (আ.) তাঁর বংশে শেষ নবীর আগমনের জন্য দোয়া করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের (আমার বংশধর) থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াত তিলাওয়াত করবে এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে আর তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৯)

মহান আল্লাহ আমাদের ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণের তাওফিক দিন। আমিন।