নবী(সঃ)-এর আহলে বাইতের উপরে কতটা জুলুম হয়েছে ?

নবী(সঃ)-এর আহলে বাইতের উপরে কতটা জুলুম হয়েছে ?
নবী(সঃ)-এর আহলে বাইতের উপরে কতটা জুলুম হয়েছে ?

আল্লাহ’র (প্রান-প্রিয়) হাবিব হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আহলে বাইত, অর্থাৎ নবী (সঃ)-এর রেখে যাওয়া কন্যা ও কন্যা থেকে যে বংশধারা, সেই বংশধারার উপরে যুগে যুগে মাত্রাতিরিক্ত জুলুম, অত্যাচার, নিগ্রহ বা অপদস্থ করা হয়েছে৷ একাধিক নির্ভযোগ্য ইতিহাস তাই বলছে৷
আর এসব অত্যাচার করেছে নবীরই সাহাবী, সাহাবীদের আত্মীয়, সাহাবীদের সন্তান বা নবীর উম্মাত৷

এখন প্রশ্ন হলো কতটা জুলুম করছে তারা ? বা সেই জুলুমের মাত্রা কতটা ??

উপরের ঐ প্রশ্নের জবাব প্রসঙ্গে নবীকন্যা হযরত ফাতিমা (আঃ) নিজেই বলেছেন, “হে আমার পিতা ! আমার উপরে যে জুলুম করা হয়েছে, যদি সেটি দিনের আলো’র উপরে পতিত হত, তাহলে দিন রাতে পরিণত হয়ে যেত৷”

শুধু কি এতটুকু ??
না শুধু এতটুকুই নয়, বরং চতুর্থ ইমাম হযরত জয়নুল আবেদিন (আঃ)ও এ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ “কারবালায় আমি যা দেখেছি, যদি তোমরা দেখতে তাহলে হাঁসি কি জিনিষ তা ভুলে যেতে ৷”

ব্যাখ্যাঃ
নবীপাক (সঃ)-এর আহলে বাইতের উপরে জুলুমের মাত্রার পরিনতি আমরা আপাতত দু’ধরনের দেখলাম, …

(১) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তনঃ
নবীর আহলে বাইতের উপরে যে অত্যাচার হয়েছে, সেটি এতটাই মারত্মক যে, দিনের আলো রাতের অন্ধকারে পরিনত হবে, অর্থাৎ আল্লাহর যে সৃষ্টিগত কাঠামো, সেই সৃষ্টির পরিবর্তন হতে বাধ্য হবে৷ আল্লাহর সৃষ্টি আর তার স্বাভাবিকতায় অবস্থান করতে পারবে না৷ প্রকৃতির পরিবর্তন হলে, রাত্রের অন্ধকারে মানুষকে দিনানিপাত করতে হবে৷
আমরা জানি আল্লাহর সৃষ্টিগত পরিকাঠামো মানবজাতির জন্য কল্যানদায়ক৷ যদি আর দিন না হয়, সূর্য যদি না উঠে তাহলে গাছপালা, নদীনালা, আকাশ বাতাস সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে ৷
— সেই ধ্বংসের হাত থেকে নবীকন্যা মা ফাতেমা আঃ মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন৷ হে মা জননী, হে সিদ্দিকা ত্বাহেরা আপনার উপরে আল্লাহ’র সালাম বর্ষিত হোক৷ আর আপনার উপরে যারা জুলুম অত্যাচার করেছে তাদের উপরে কোটি কোটি লানত বর্ষিত হোক৷ তারা জাহান্নামের সর্বনিম্নে অবস্থান করুক৷

(২) মানুষের সৃষ্টিগত প্রকৃতির পরিবর্তনঃ
মানুষের প্রকৃতিগত পরিকাঠামোর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো হলো মানুষের মুখে হাঁসি-কান্না৷ হাসি কান্না মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ ৷
নবীর আহলে বাইতের উপরে যে অত্যাচার জুলুম হয়েছে, সেটি এতটাই মারত্মক যে, মানুষের মধ্যে আর হাঁসি বলে আর কিছুই থাকতো না৷ অথচ মানবজীবনের জন্য আল্লাহপাক হাঁসি’কে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত দান করেছেন৷ পরিবেশগত প্রতিবেশীসূলভ জীবন যাপনে মানুষ মানুষের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে ‘হাঁসি’ একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়৷
কিন্তু কারাবালার জুলুম অর্থাৎ আহলে বাইতের উপরে জুলুম, অত্যাচারটি এতটাই মারত্মাক ছিল যে, আল্লাহর সৃষ্টিগত পরিকাঠামোর একটি অংশ ‘হাঁসি’ দুনিয়াতে আর থাকতো না ৷ মানুষ হাঁসি ভুলেই যেত৷ এতে মানুষের আবেগের আর বহিঃপ্রকাশ হত না ৷ ফলে মানুষ আর মানুষই থাকতো না ৷
অর্থাৎ দুনিয়াতে রাত্রী নেমে আসতো দিন আর হতো না, আর অপরদিকে মানুষের হাসিও উধাও হয়ে যেত৷

অথচ কারবালায় এজিদের হয়ে বহু হাজি, হাফেজ, আলেম, ক্বারী, নামাজি, রোজাদার অবস্থান করছিলো,
ইমাম হুসাইন আঃ বলেছিলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই ?”
সত্যিকথা বলতে কী কারবালা আমাদের অনেক শিক্ষার মধ্যে এও একটি শিক্ষা দিয়েছে যে, নামাজি, হাফেজ, ক্বারী, হাজি হলেই মুসলমান হয়ে যাবে এমন কোন বিষয়ই নয়৷
তাই হে নবীর আহলে বাইতগণ আপনাদের উপরে সালাম৷ আর আপনাদের উপরে যারা জুলুম করেছে তাদের উপরে লানত ৷
……. মুস্তাক আহমদ
(লেখা চলবে…..)