মায়ের মর্যাদা সব ধর্মেই অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের। সবাইই মাকে সম্মান করেন ও মাকে এবং মায়ের মহত্ত্বকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধাভরে। আর ইসলাম ধর্মে এই শ্রদ্ধাবোধ সর্বোচ্চ পর্যায়ের।
অতীতের নবী-রাসুলগণ মাকে সম্মানের উপদেশ দিতেন। কিন্তু অন্যদের এই উপদেশ দেয়ার আগে তারা নিজ নিজ মাকে শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে রহমত ও ক্ষমা চেয়ে দোয়াও করতেন।
হযরত ইব্রাহিম (আ)
হযরত ইব্রাহিম (আ) নিজের বাবা ও মায়ের জন্য দোয়া করেছেন এবং মুমিনদের পাশাপাশি তাঁদের জন্যও বিচার দিবসে আল্লাহর ক্ষমার প্রত্যাশা করে বলেছেন:
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
হযরত মুসা (আ) ও বেহেশতে তাঁর প্রতিবেশী
একদিন হযরত মুসা (আ) আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে বললেন, হে আল্লাহ! বেহেশতে যে আমার সঙ্গী বা প্রতিবেশী হবে তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিন। জবাব এল: হে মুসা অমুক মহল্লার অমুক দোকানে যাও এবং সেই দোকানে কাজে ব্যস্ত যুবক ব্যক্তিটিই বেহেশতে তোমার সঙ্গী হবে। হযরত মুসা (আ) খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন যে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধা মায়ের সব কাজই করে দেয় ওই যুবক এবং বিনিময়ে মা তার জন্য এই দোয়া করে যে: হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেটাকে উচ্চতর বেহেশতে মুসা বিন ইমরানের সঙ্গে স্থান দাও।
মায়ের প্রতি হযরত ঈসার (আ) মনোভাব
হযরত ঈসা (আ) জীবনের শুরুর দিকেই নবজাতক অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে এই বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি তাঁকে নিজের মায়ের প্রতি কল্যাণকামী বা সৎকর্মশীল করেছেন। কারণ তিনি জানতেন যে এ বিষয়টি উচ্চতম মূল্যবোধ। তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ আমাকে আমার মায়ের প্রতি কল্যাণকামী করেছেন ও আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।
বেহেশত মায়ের পায়ের নীচে: মহানবী (সা)
অন্যান্য ধর্মে মায়ের প্রতি উচ্চ পর্যায়ের সম্মান দেখানো হলেও ইসলাম ধর্ম মায়ের প্রতি সর্বোচ্চ মর্যাদায় বিশ্বাসী। পবিত্র কুরআনের সুরা লোকমান ও আহক্বাফে মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হতে বলেছে এবং সন্তানদের জন্য মা-বাবার কষ্ট ও কঠোর পরিশ্রমের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে।
মহানবীর (সা) হাদিসেও এবং মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের বাণীতে মায়ের অধিকার ও উচ্চতম মর্যাদার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
মহানবীর (সা) হাদিসে বলা হয়েছে: الجنّةُ تحتَ اقدامِ الامّهات
অর্থাৎ মায়েদের পায়ের নীচে বেহেশত।–অর্থাৎ মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করা ছাড়া বেহেশত পাওয়া সম্ভব নয়।
মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য এবং চতুর্থ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে খ্যাত ইমাম যাইনুল আবেদিনের দৃষ্টিতে মায়ের মর্যাদা, অধিকার ও মহত্ত্ব:
তোমার ওপর তোমার মায়ের অধিকার হল এটা জানা যে তিনি তোমাকে (গর্ভে) বহন করেছেন এমনভাবে যে সেভাবে কেউ অন্যকে বহন করে না; এবং তিনি তার হৃদয়ের ফল থেকে তোমাকে দিয়েছেন যা কেউ অন্যকে দেয় না; তিনি তোমাকে তার সমস্ত অঙ্গ দিয়ে আলিঙ্গন করেছিলেন এবং তোমাকে আবৃত করার সময় ক্ষুধার্ত হওয়ার ভয় পাননি। তিনি সূর্যের প্রখর রোদ সহ্য করেও তোমাকে রেখেছেন ছায়ায় এবং তোমার জন্য বর্জন করেছেন নিদ্রা, আর রক্ষা করেছেন তোমাকে শীত ও উষ্ণতার তীব্রতা হতে। এতসব সেবার বিনিময়ে তুমি কি কখনও তাঁর প্রতি হতে পারবে পুরোপুরি কৃতজ্ঞ তোমার আল্লাহর সহায়তা ও তাঁর দেয়া সুযোগ ছাড়া?
যে মা সন্তানদের এত গভীর ভালোবাসা দিয়ে ও ব্যাপক পরিশ্রম আর কষ্ট স্বীকার করে প্রতিপালন করেন তিনি সন্তানদের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বড় অধিকারের দাবি রাখেন এবং সেই অধিকার আদায়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। আর এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে মা-বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের প্রতি বিরক্তি দেখিয়ে উহ্ বা উফ্ শব্দটিও বলো না। কখনও মায়ের হৃদয়ে আঘাত দিও না ও মায়ের প্রতি রুক্ষ, রূঢ় বা অবাধ্য হয়ো না। মাকে কষ্ট দিলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন।
মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত নিজ নিজ মায়েদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন ও তাঁদের প্রতি ছিলেন অসাধারণ যত্নশীল। আর এ থেকেই ফুটে ওঠে মায়ের উচ্চতর মর্যাদা। ইসলামের দৃষ্টিতে মায়ের মর্যাদা এত উচ্চতর যে পবিত্র কুরআনের আয়াতে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতের পাশেই তাদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুন 2 2024
মায়ের গুরুত্ব বুঝুন: মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
মায়ের মর্যাদা সব ধর্মেই অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের। সবাইই মাকে সম্মান করেন ও মাকে এবং মায়ের মহত্ত্বকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধাভরে। আর ইসলাম ধর্মে এই শ্রদ্ধাবোধ সর্বোচ্চ পর্যায়ের।
অতীতের নবী-রাসুলগণ মাকে সম্মানের উপদেশ দিতেন। কিন্তু অন্যদের এই উপদেশ দেয়ার আগে তারা নিজ নিজ মাকে শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে রহমত ও ক্ষমা চেয়ে দোয়াও করতেন।
হযরত ইব্রাহিম (আ)
হযরত ইব্রাহিম (আ) নিজের বাবা ও মায়ের জন্য দোয়া করেছেন এবং মুমিনদের পাশাপাশি তাঁদের জন্যও বিচার দিবসে আল্লাহর ক্ষমার প্রত্যাশা করে বলেছেন:
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
হযরত মুসা (আ) ও বেহেশতে তাঁর প্রতিবেশী
একদিন হযরত মুসা (আ) আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে বললেন, হে আল্লাহ! বেহেশতে যে আমার সঙ্গী বা প্রতিবেশী হবে তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিন। জবাব এল: হে মুসা অমুক মহল্লার অমুক দোকানে যাও এবং সেই দোকানে কাজে ব্যস্ত যুবক ব্যক্তিটিই বেহেশতে তোমার সঙ্গী হবে। হযরত মুসা (আ) খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন যে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধা মায়ের সব কাজই করে দেয় ওই যুবক এবং বিনিময়ে মা তার জন্য এই দোয়া করে যে: হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেটাকে উচ্চতর বেহেশতে মুসা বিন ইমরানের সঙ্গে স্থান দাও।
মায়ের প্রতি হযরত ঈসার (আ) মনোভাব
হযরত ঈসা (আ) জীবনের শুরুর দিকেই নবজাতক অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে এই বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি তাঁকে নিজের মায়ের প্রতি কল্যাণকামী বা সৎকর্মশীল করেছেন। কারণ তিনি জানতেন যে এ বিষয়টি উচ্চতম মূল্যবোধ। তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ আমাকে আমার মায়ের প্রতি কল্যাণকামী করেছেন ও আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।
বেহেশত মায়ের পায়ের নীচে: মহানবী (সা)
অন্যান্য ধর্মে মায়ের প্রতি উচ্চ পর্যায়ের সম্মান দেখানো হলেও ইসলাম ধর্ম মায়ের প্রতি সর্বোচ্চ মর্যাদায় বিশ্বাসী। পবিত্র কুরআনের সুরা লোকমান ও আহক্বাফে মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হতে বলেছে এবং সন্তানদের জন্য মা-বাবার কষ্ট ও কঠোর পরিশ্রমের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে।
মহানবীর (সা) হাদিসেও এবং মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের বাণীতে মায়ের অধিকার ও উচ্চতম মর্যাদার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
মহানবীর (সা) হাদিসে বলা হয়েছে: الجنّةُ تحتَ اقدامِ الامّهات
অর্থাৎ মায়েদের পায়ের নীচে বেহেশত।–অর্থাৎ মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করা ছাড়া বেহেশত পাওয়া সম্ভব নয়।
মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য এবং চতুর্থ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে খ্যাত ইমাম যাইনুল আবেদিনের দৃষ্টিতে মায়ের মর্যাদা, অধিকার ও মহত্ত্ব:
তোমার ওপর তোমার মায়ের অধিকার হল এটা জানা যে তিনি তোমাকে (গর্ভে) বহন করেছেন এমনভাবে যে সেভাবে কেউ অন্যকে বহন করে না; এবং তিনি তার হৃদয়ের ফল থেকে তোমাকে দিয়েছেন যা কেউ অন্যকে দেয় না; তিনি তোমাকে তার সমস্ত অঙ্গ দিয়ে আলিঙ্গন করেছিলেন এবং তোমাকে আবৃত করার সময় ক্ষুধার্ত হওয়ার ভয় পাননি। তিনি সূর্যের প্রখর রোদ সহ্য করেও তোমাকে রেখেছেন ছায়ায় এবং তোমার জন্য বর্জন করেছেন নিদ্রা, আর রক্ষা করেছেন তোমাকে শীত ও উষ্ণতার তীব্রতা হতে। এতসব সেবার বিনিময়ে তুমি কি কখনও তাঁর প্রতি হতে পারবে পুরোপুরি কৃতজ্ঞ তোমার আল্লাহর সহায়তা ও তাঁর দেয়া সুযোগ ছাড়া?
যে মা সন্তানদের এত গভীর ভালোবাসা দিয়ে ও ব্যাপক পরিশ্রম আর কষ্ট স্বীকার করে প্রতিপালন করেন তিনি সন্তানদের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বড় অধিকারের দাবি রাখেন এবং সেই অধিকার আদায়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। আর এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে মা-বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের প্রতি বিরক্তি দেখিয়ে উহ্ বা উফ্ শব্দটিও বলো না। কখনও মায়ের হৃদয়ে আঘাত দিও না ও মায়ের প্রতি রুক্ষ, রূঢ় বা অবাধ্য হয়ো না। মাকে কষ্ট দিলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন।
মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত নিজ নিজ মায়েদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন ও তাঁদের প্রতি ছিলেন অসাধারণ যত্নশীল। আর এ থেকেই ফুটে ওঠে মায়ের উচ্চতর মর্যাদা। ইসলামের দৃষ্টিতে মায়ের মর্যাদা এত উচ্চতর যে পবিত্র কুরআনের আয়াতে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতের পাশেই তাদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
By bn • প্রকাশনা কেন্দ্র 0