হিজরি আটই রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর দিন। হিজরি ২৬০ সালের এইদিনে মানবজাতির সর্বশেষ ত্রাণ-কর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.)’র পিতা এবং নবী-বংশের অন্যতম নিষ্পাপ ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.) শহীদ হয়েছিলেন অত্যাচারী আব্বাসীয় শাসকের হাতে মাত্র ২৮ বছর বয়সে।
হিজরি আটই রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর দিন। হিজরি ২৬০ সালের এইদিনে মানবজাতির সর্বশেষ ত্রাণ-কর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.)’র পিতা এবং নবী-বংশের অন্যতম নিষ্পাপ ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.) শহীদ হয়েছিলেন অত্যাচারী আব্বাসীয় শাসকের হাতে মাত্র ২৮ বছর বয়সে।
অবশ্য তাঁর তথা একাদশ ইমামের মাত্র ছয় বছরের ইমামত বা নেতৃত্ব কে দিয়েছে আরো একটি গৌরবময় সোনালী অধ্যায়। জালিম শাসকদের ব্যাপক দমন-পীড়ন ও তাদের সৃষ্ট অসংখ্য বাধা আর শ্বাঁসরূদ্ধকর পরিস্থিতি সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তাঁর ধর্মের সংরক্ষকদের মাধ্যমে ইসলামের আলোকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সত্য-সন্ধানী ও খোদা-প্রেমিক মানুষদের অন্তরে। এই মহান ইমামের শাহাদতের বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র অনেক মু’জিজা ও অদৃশ্য কর্মকাণ্ডের কথা জানা যায়। যেমন, তিনি মানুষের মনের অনেক গোপন কথা বা বাসনা জেনে তাদের সেইসব বাসনা পূরণ করেছেন, অদৃশ্যের অনেক খবর দিয়েছেন, নানা ভাষাভাষী ভৃত্যদের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলেছেন। ইমামের সবগুলো মু’জিজা তুলে ধরলে একটি বই লেখার দরকার হবে। আমরা এখানে ইমামের কয়েকটি মু’জিজা বা অলৌকিক ক্ষমতার ঘটনা তুলে ধরব। ইমামের একটি মু’জিজার ঘটনা এরূপ যে, মুহাম্মাদ ইবনে আইয়াশ বলেন, একদিন আমরা কয়েকজন একত্রে বসে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র মু’জিজা সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। আমাদের মাঝে অবস্থানরত এক এক নাসিবি তথা বিশ্বনবী (সা,)’র আহলে বাইতের বিদ্বেষী বলল: আমি কয়েকটা প্রশ্ন কালিবিহীন কলম দিয়ে লিখব। যদি ইমাম জবাব দিতে পারেন তাহলে বিশ্বাস করব যে তিনি সত্যিকারের ইমাম। আমরা সে কথা মত কতগুলো বিষয় লিখলাম নাসিবির কালিবিহীন কলমে। আর নাসেবি তার প্রশ্নগুলো লিখল একই কলমে। আমরা সেগুলো ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র কাছে পাঠালাম। ইমাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠালেন এবং নাসেবির কাগজের ওপর তার নাম, তার বাবার নাম ও তার মায়ের নাম লিখে পাঠালেন। নাসেবি তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তাঁর হুশ ফিরে আসার পর সে ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল ও ইমামের একনিষ্ঠ অনুসারীদের মধ্যে শামিল হল। (কাশফুল গাম্ম, খণ্ড-৩, পৃ-৩০২)
আবু হাশিম জা’ফরি বলেন: একবার চেয়েছিলাম ইমাম আসকারি (আ.)’র কাছে একটি আংটি তৈরি করার মত সামান্য রূপা সাহায্য চাইব। ইমামের সাক্ষাতে গেলাম, বসলাম। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম। এরপর যখন আসার জন্য রওনা হলাম ইমাম আমাকে একটি আংটি দিয়ে বললেন, রূপা চেয়েছিলে, আমি নাগিন (মহামূল্যবান পাথর-বিশিষ্ট আংটি) দিলাম এবং আংটির মজুরি অতিরিক্ত লাভ হিসেবে পেলে। তোমার মঙ্গল হোক। বললাম: হে আমার মাওলা, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর অলি ও আমার ইমাম। আপনার অনুসরণ আমার ধর্মীয় কর্তব্য। তিনি বললেন: হে আবুল হাশিম, আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুক। (উসুলে কাফি, খণ্ড-১, পৃ-৫১২)
মুহাম্মাদ ইবনে রাবি শাইবানি বলেছেন: একবার আহওয়াজে (ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ) এক দ্বিত্ববাদীর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম। এরপর সামেরা গিয়েছিলাম। ওই দ্বিত্ববাদীর যুক্তির কিছু প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল। ফলে একত্ববাদের ওপর কিছু সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। একদিন আহমদ ইবনে খুসাইব-এর বাড়িতে বসেছিলাম এমন সময় ইমাম হাসান আসকারি (আ.) এক সভা থেকে এলেন। তিনি আমাকে লক্ষ্য করলেন এবং আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন: আল্লাহ এক এবং তাঁকে অদ্বিতীয় মেনে নাও। আমি বেহুঁশ হয়ে পড়লাম। (কাশফুল গাম্ম, ইমামগণের আধ্যাত্মিক অধ্যায়, খণ্ড-৩, পৃ-৩০৫)
আবু হামজা বলেন, অনেকবার দেখেছি ইমাম তাঁর খাদেমদের সঙ্গে (যারা বিভিন্ন দেশী, যেমন, তুর্কি, রুমি, রাশিয়ান ও অন্যান্য ভাষাভাষী ছিল) তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতেন। আমি অবাক হয়ে যেতাম এবং মনে মনে বলতাম… ইমাম মদীনার অধিবাসী অথচ কিভাবে তিনি এত ভাষায় কথা বলেন।
ইমাম আমার দিকে ফিরে বললেন: মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধিদের অন্যান্য সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং সব কিছুর ওপর জ্ঞান দান করেছেন। (আল্লাহর মনোনীত) ইমামগণ নানা ভাষা, নানা বংশ পরিচয় ও জরুরি বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকেন। যদি এ রকম না হত তাহলে সাধারণ মানুষ ও ইমামগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতো না। (ইরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ-৩২২)
আবু হাশিম জাফরি বলেন: এক ব্যক্তি ইমামকে প্রশ্ন করেন নারী কেন অবহেলিত যে পিতার সম্পদের দুই ভাগ পায় ছেলে অথচ নারী পায় মাত্র এক ভাগ? ইমাম বলেন: এর কারণ, জিহাদ করা, সাংসারিক খরচাদি চালানো পুরুষের দায়িত্ব এবং ভুলবশত: কাউকে হত্যা করলে তার জরিমানা তথা দিয়া দেয়াও পুরুষের ওপর অর্পিত হয়। আর এসব কিছুই নারীর দায়িত্ব বহির্ভূত।
আবু হাশিম বলেন, আমি মনে মনে বললাম এর আগে শুনেছি যে ইবনে আবিল উজজা ইমাম সাদিক্ব (আ.)’র কাছে ঠিক একই প্রশ্ন করেছিল এবং ঠিক এরকম জবাবই পেয়েছিল।
ইমাম আসকারি (আ.) তখন আমার দিকে ফিরে বললেন: হ্যাঁ, ঠিক একই প্রশ্ন ইবনে আবিল উজজা করেছিল। আমাদের যে কারো কাছেই (বিশ্বনবী-সা. ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের) যখন একই প্রশ্ন করা হয় তার উত্তরও আমরা একই রকম দিয়ে থাকি। পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ইমামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানগত বিষয়ে আমাদের প্রথম ও শেষ সমমর্যাদার অধিকারী, তবে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র বিশেষত্ব ও মর্যাদা অতুলনীয়। (কাশফুল গাম্ম, খণ্ড-৩, পৃ-৩০৩)
[উল্লেখ্য, শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের অনেক ধর্মীয় নেতা ও চিন্তাবিদ মনে করেন মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.) প্রায় ১২০০ বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের বংশ ধারায় হযরত ইমাম হুসাইন-আ.’র নবম অধস্তন বংশধর। অন্য কথায় তিনি ১১ তম ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র পুত্র এবং মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি হযরত ঈসা (আ.)’র মত অদৃশ্য হয়ে যান। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বিশ্বব্যাপী অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন পবিত্র মক্কায় এবং হযরত ঈসা নবী (আ.) তাঁর পেছনে নামাজ পড়বেন। অবশ্য ঠিক কখন তিনি আবারও আবির্ভূত হবেন তা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, (কোনো ইমাম তা জেনে থাকলেও মহান আল্লাহর নির্দেশিত গোপন বিষয় হিসেবে তারা তা প্রকাশ করেননি) যদিও তাঁর আবির্ভূত হওয়ার প্রাক্কালের কিছু লক্ষণ বা আলামতের কথা হাদিসে এসেছে। তিনি সারা বিশ্বে ইসলাম ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর পুনরাবির্ভাব ত্বরান্বিত করুন।]
আগস্ট 16 2023
ইমাম মাহদি(আ.)’র বাবার কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা
হিজরি আটই রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর দিন। হিজরি ২৬০ সালের এইদিনে মানবজাতির সর্বশেষ ত্রাণ-কর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.)’র পিতা এবং নবী-বংশের অন্যতম নিষ্পাপ ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.) শহীদ হয়েছিলেন অত্যাচারী আব্বাসীয় শাসকের হাতে মাত্র ২৮ বছর বয়সে।
হিজরি আটই রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর দিন। হিজরি ২৬০ সালের এইদিনে মানবজাতির সর্বশেষ ত্রাণ-কর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.)’র পিতা এবং নবী-বংশের অন্যতম নিষ্পাপ ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.) শহীদ হয়েছিলেন অত্যাচারী আব্বাসীয় শাসকের হাতে মাত্র ২৮ বছর বয়সে।
অবশ্য তাঁর তথা একাদশ ইমামের মাত্র ছয় বছরের ইমামত বা নেতৃত্ব কে দিয়েছে আরো একটি গৌরবময় সোনালী অধ্যায়। জালিম শাসকদের ব্যাপক দমন-পীড়ন ও তাদের সৃষ্ট অসংখ্য বাধা আর শ্বাঁসরূদ্ধকর পরিস্থিতি সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তাঁর ধর্মের সংরক্ষকদের মাধ্যমে ইসলামের আলোকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সত্য-সন্ধানী ও খোদা-প্রেমিক মানুষদের অন্তরে। এই মহান ইমামের শাহাদতের বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র অনেক মু’জিজা ও অদৃশ্য কর্মকাণ্ডের কথা জানা যায়। যেমন, তিনি মানুষের মনের অনেক গোপন কথা বা বাসনা জেনে তাদের সেইসব বাসনা পূরণ করেছেন, অদৃশ্যের অনেক খবর দিয়েছেন, নানা ভাষাভাষী ভৃত্যদের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলেছেন। ইমামের সবগুলো মু’জিজা তুলে ধরলে একটি বই লেখার দরকার হবে। আমরা এখানে ইমামের কয়েকটি মু’জিজা বা অলৌকিক ক্ষমতার ঘটনা তুলে ধরব। ইমামের একটি মু’জিজার ঘটনা এরূপ যে, মুহাম্মাদ ইবনে আইয়াশ বলেন, একদিন আমরা কয়েকজন একত্রে বসে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র মু’জিজা সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। আমাদের মাঝে অবস্থানরত এক এক নাসিবি তথা বিশ্বনবী (সা,)’র আহলে বাইতের বিদ্বেষী বলল: আমি কয়েকটা প্রশ্ন কালিবিহীন কলম দিয়ে লিখব। যদি ইমাম জবাব দিতে পারেন তাহলে বিশ্বাস করব যে তিনি সত্যিকারের ইমাম। আমরা সে কথা মত কতগুলো বিষয় লিখলাম নাসিবির কালিবিহীন কলমে। আর নাসেবি তার প্রশ্নগুলো লিখল একই কলমে। আমরা সেগুলো ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র কাছে পাঠালাম। ইমাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠালেন এবং নাসেবির কাগজের ওপর তার নাম, তার বাবার নাম ও তার মায়ের নাম লিখে পাঠালেন। নাসেবি তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তাঁর হুশ ফিরে আসার পর সে ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল ও ইমামের একনিষ্ঠ অনুসারীদের মধ্যে শামিল হল। (কাশফুল গাম্ম, খণ্ড-৩, পৃ-৩০২)
আবু হাশিম জা’ফরি বলেন: একবার চেয়েছিলাম ইমাম আসকারি (আ.)’র কাছে একটি আংটি তৈরি করার মত সামান্য রূপা সাহায্য চাইব। ইমামের সাক্ষাতে গেলাম, বসলাম। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম। এরপর যখন আসার জন্য রওনা হলাম ইমাম আমাকে একটি আংটি দিয়ে বললেন, রূপা চেয়েছিলে, আমি নাগিন (মহামূল্যবান পাথর-বিশিষ্ট আংটি) দিলাম এবং আংটির মজুরি অতিরিক্ত লাভ হিসেবে পেলে। তোমার মঙ্গল হোক। বললাম: হে আমার মাওলা, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর অলি ও আমার ইমাম। আপনার অনুসরণ আমার ধর্মীয় কর্তব্য। তিনি বললেন: হে আবুল হাশিম, আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুক। (উসুলে কাফি, খণ্ড-১, পৃ-৫১২)
মুহাম্মাদ ইবনে রাবি শাইবানি বলেছেন: একবার আহওয়াজে (ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ) এক দ্বিত্ববাদীর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম। এরপর সামেরা গিয়েছিলাম। ওই দ্বিত্ববাদীর যুক্তির কিছু প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল। ফলে একত্ববাদের ওপর কিছু সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। একদিন আহমদ ইবনে খুসাইব-এর বাড়িতে বসেছিলাম এমন সময় ইমাম হাসান আসকারি (আ.) এক সভা থেকে এলেন। তিনি আমাকে লক্ষ্য করলেন এবং আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন: আল্লাহ এক এবং তাঁকে অদ্বিতীয় মেনে নাও। আমি বেহুঁশ হয়ে পড়লাম। (কাশফুল গাম্ম, ইমামগণের আধ্যাত্মিক অধ্যায়, খণ্ড-৩, পৃ-৩০৫)
আবু হামজা বলেন, অনেকবার দেখেছি ইমাম তাঁর খাদেমদের সঙ্গে (যারা বিভিন্ন দেশী, যেমন, তুর্কি, রুমি, রাশিয়ান ও অন্যান্য ভাষাভাষী ছিল) তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতেন। আমি অবাক হয়ে যেতাম এবং মনে মনে বলতাম… ইমাম মদীনার অধিবাসী অথচ কিভাবে তিনি এত ভাষায় কথা বলেন।
ইমাম আমার দিকে ফিরে বললেন: মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধিদের অন্যান্য সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং সব কিছুর ওপর জ্ঞান দান করেছেন। (আল্লাহর মনোনীত) ইমামগণ নানা ভাষা, নানা বংশ পরিচয় ও জরুরি বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকেন। যদি এ রকম না হত তাহলে সাধারণ মানুষ ও ইমামগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতো না। (ইরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ-৩২২)
আবু হাশিম জাফরি বলেন: এক ব্যক্তি ইমামকে প্রশ্ন করেন নারী কেন অবহেলিত যে পিতার সম্পদের দুই ভাগ পায় ছেলে অথচ নারী পায় মাত্র এক ভাগ? ইমাম বলেন: এর কারণ, জিহাদ করা, সাংসারিক খরচাদি চালানো পুরুষের দায়িত্ব এবং ভুলবশত: কাউকে হত্যা করলে তার জরিমানা তথা দিয়া দেয়াও পুরুষের ওপর অর্পিত হয়। আর এসব কিছুই নারীর দায়িত্ব বহির্ভূত।
আবু হাশিম বলেন, আমি মনে মনে বললাম এর আগে শুনেছি যে ইবনে আবিল উজজা ইমাম সাদিক্ব (আ.)’র কাছে ঠিক একই প্রশ্ন করেছিল এবং ঠিক এরকম জবাবই পেয়েছিল।
ইমাম আসকারি (আ.) তখন আমার দিকে ফিরে বললেন: হ্যাঁ, ঠিক একই প্রশ্ন ইবনে আবিল উজজা করেছিল। আমাদের যে কারো কাছেই (বিশ্বনবী-সা. ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের) যখন একই প্রশ্ন করা হয় তার উত্তরও আমরা একই রকম দিয়ে থাকি। পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ইমামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানগত বিষয়ে আমাদের প্রথম ও শেষ সমমর্যাদার অধিকারী, তবে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র বিশেষত্ব ও মর্যাদা অতুলনীয়। (কাশফুল গাম্ম, খণ্ড-৩, পৃ-৩০৩)
[উল্লেখ্য, শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের অনেক ধর্মীয় নেতা ও চিন্তাবিদ মনে করেন মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদি (আ.) প্রায় ১২০০ বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের বংশ ধারায় হযরত ইমাম হুসাইন-আ.’র নবম অধস্তন বংশধর। অন্য কথায় তিনি ১১ তম ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারি (আ.)’র পুত্র এবং মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি হযরত ঈসা (আ.)’র মত অদৃশ্য হয়ে যান। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বিশ্বব্যাপী অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন পবিত্র মক্কায় এবং হযরত ঈসা নবী (আ.) তাঁর পেছনে নামাজ পড়বেন। অবশ্য ঠিক কখন তিনি আবারও আবির্ভূত হবেন তা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, (কোনো ইমাম তা জেনে থাকলেও মহান আল্লাহর নির্দেশিত গোপন বিষয় হিসেবে তারা তা প্রকাশ করেননি) যদিও তাঁর আবির্ভূত হওয়ার প্রাক্কালের কিছু লক্ষণ বা আলামতের কথা হাদিসে এসেছে। তিনি সারা বিশ্বে ইসলাম ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর পুনরাবির্ভাব ত্বরান্বিত করুন।]
By bn • অন্যান্য, একেশ্বরবাদীদের মধ্যে ঐক্য, মুস্তাবসেরগণের তাবলীগ, মুস্তাবসেরগণের প্রবন্ধ এবং মতামত 0 • Tags: অলৌকিক ঘটনা, ইমাম মাহদি(আ.), ইসলাম, পবিত্র আহলে বাইত, বিশ্বনবী, ব্বাসীয় শাসক, মানবজাতির, মু'জিজা