ইসলামে জীবনের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার

ইসলামে জীবনের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার
ইসলামে জীবনের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার

মানুষ অপহরণ করে এবং জিম্মি বানিয়ে মুক্তিপণ আদায় ও গুম করা মানুষের স্বাভাবিক জীবনের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকি। বেঁচে থাকা ও নিরাপদ-নিশ্চিন্ত জীবনযাপন মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ।’ (অনুচ্ছেদ : ৩২) ‘চলাফেরার স্বাধীনতা’ (অনুচ্ছেদ : ৩৬)

এ ছাড়া আরো অসংখ্য বিধি-বিধান জনগণের শান্তি ও উন্নতির রক্ষাকবচ হিসেবে স্বীকৃত।

অপহরণ, জিম্মি, গুম-হত্যার মতো অপকর্ম ইসলাম সমর্থন করে না। এতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে তোমরা বিশৃঙ্খলা কোরো না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও মারাত্মক অপরাধ।

’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯১)
অপরাধীচক্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের নানা মহড়ায় মত্ত। নিরীহ-নিরপরাধ ‘বনি আদম’কে অপহরণ, পরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘না ফেরার দেশে’…এভাবেই গুম হয় মানুষ, গুম হয় মানুষের লাশ। চতুষ্পদ প্রাণী খোয়া গেলে তা পাওয়া যেত ‘খোঁয়াড়ে’, অথচ খোঁজ মেলেনি কত হতভাগা বনি আদমের।

অপহরণ ও গুম ঈমানের পরিপন্থী ঘৃণিত কর্ম।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মূল্যবান বস্তু ছিনিয়ে নেয়, আর লোকেরা এ সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন সে ব্যক্তি (প্রকৃত) মুমিন থাকে না।’ (মুসলিম)
মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, একজন স্বাধীন নাগরিককে আটকে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বন্দি রাখা বৈধ নয়।’ (মুয়াত্তা)

অপহরণ-সন্ত্রাসের ধারায় ঘটে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মহাপাপ।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো নর হত্যা কিংবা পৃথিবী বা সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে বিচারের রায় ছাড়া যদি কেউ কোনো মানুষকে হত্যা করে, তা হলে সে যেন সব মানুষকে (মানবতা) হত্যা করেছে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)

মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে তিনি সুরা বনি ইসরাঈলের ৭০ নম্বর আয়াতে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি এবং তাকে জল-স্থলে বিচরণের সামর্থ্য দিয়েছি।’ কিন্তু নানা পাপাচারে মানুষের সম্মান, সৌন্দর্য ও সৃষ্টি অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা ত্বিনের ভাষায়—

‘সুন্দর গঠন দিয়ে মানব অতিশয়,

সৃষ্টি করেছি আমি তাদের নিশ্চয়

সৃষ্টি করিয়া আমি সুন্দর গঠনে,

অতঃপর দিয়েছি আমি তাকে অধঃপতনে…।’ (কাব্যানুবাদ, আয়াত : ৪ ও ৫)

মানুষের জীবন ও সম্পদ একেকটি পবিত্র আমানত। ইসলামের অবস্থান সব সময়ই সব অমানবিক অপকমের্র বিরুদ্ধে। মহান আল্লাহর আদেশ ও প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন হলো সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা। প্রিয় নবী (সা.)-এর বিদায় হজের ঘোষণা : ‘হে মানবজাতি। …নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের জীবন-সম্পদ, সম্মান, সম্ভ্রম তোমাদের পরস্পরের কাছে পবিত্র।’ (বুখারি)

জীবনের সব মুহূর্ত হোক নির্ভয়। এ জন্য শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে প্রতিহত করা। সুধীসমাজ ও জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের কর্তব্য হলো বাচনিক প্রক্রিয়ায় সত্যের পক্ষ অবলম্বন ও সত্য উদঘাটনে সোচ্চার থাকা এবং সাধারণ মানুষের উচিত সব অন্যায়কে অন্তর থেকে তীব্রভাবে ঘৃণা করা। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ সমাজবিরোধী অন্যায় ও গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন তা শক্তি প্রয়োগে প্রতিহত করে। শক্তি প্রয়োগে সক্ষম না হলে যেন সদুপদেশ দ্বারা প্রতিবিধান করে এবং তাতেও সক্ষম না হলে যেন তা আন্তরিকভাবে ঘৃণা করে। আর এটাই হলো দুর্বলতম ঈমানের প্রকাশ।’ (বুখারি ও মুসলিম)

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান