নিকারাগুয়ায় মুসলিম আগমনের ইতিহাস

নিকারাগুয়ায় মুসলিম আগমনের ইতিহাস
নিকারাগুয়ায় মুসলিম আগমনের ইতিহাস

মধ্য আমেরিকার বৃহত্তম দেশ নিকারাগুয়া। জীববৈচিত্র্য ও জৈবসম্পদে পরিপূর্ণ দেশটির উত্তরে হন্ডুরাস, দক্ষিণে কোস্টারিকা, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর অবস্থিত। নিকারাগুয়ার মোট আয়তন এক লাখ ৩০ হাজার ৪২৭ বর্গকিলোমিটার। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জনসংখ্যা ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৪০।

দেশটির বেশির ভাগ নাগরিক খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। দেশটিতে মাত্র কয়েক হাজার মুসলিম বসবাস করে, যাদের বেশির ভাগই অভিবাসী আরব মুসলিম। মানাগুয়া দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী।
ধারণা করা হয়, নিকারাগুয়ায় মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১২০০০ অব্দে।

তবে আধুনিক নিকারাগুয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে। দেশটির ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সময়ে বা এর কিছু কাল আগে। আরব ইতিহাস গবেষকদের দাবি, নিকারাগুয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় ১১ শতকে। তখন আফ্রিকান মুসলিমরা আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য অংশের মতো নিকারাগুয়ায় আগমন করে এবং প্রাচীন আদিবাসীদের ভেতর ইসলাম প্রচার করে।

প্রমাণ হিসেবে তারা মধ্য আমেরিকার সেই প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষের কথা উল্লেখ করেন, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগের রীতি, শৈলী ও উপকরণ ব্যবহারে তৈরি হয়েছিল। যেমন মসজিদটি তৈরিতে পাথর ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৫২২ খ্রিস্টাব্দে নিকারাগুয়ায় স্প্যানিশ দখলদাররা পৌঁছানোর পর তারা সেখানে একত্ববাদের বিশ্বাসসহ ইসলামী মূল্যবোধের বহু উপকরণ খুঁজে পেয়েছিল, যা স্প্যানিশদের ক্ষুব্ধ করেছিল এবং তারা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আদিবাসীদের ওপর চড়াও হয়। ফলে তারা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়। ১৪৯২ সালে স্পেনে মুসলিম শাসনের পতন হলে বহু মুসলিমকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।

যদিও এসব মুসলমান ধর্ম পালনে স্বাধীন ছিল না, তবু আমেরিকা মহাদেশে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও তা চর্চায় যথাসাধ্য অবদান রেখেছিল। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে নিকারাগুয়া স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত স্পেনের ইসলামবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত থাকে। ফলে সাময়িকভাবে হলেও দেশটিতে ইসলামের আলো স্তিমিত হয়ে যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে এবং ফিলিস্তিন ভূমি তাদের হাতছাড়া হলে কয়েকটি মুসলিম ফিলিস্তিনি পরিবার নিকারাগুয়ায় দেশান্তরিত হয়। কারো কারো মতে, ১৯১৭ সাল পর্যন্ত নিকারাগুয়ায় ৪০টি ফিলিস্তিনি পরিবার এসেছিল। এটাকেই ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা নিকারাগুয়ায় ইসলামের সূচনাকাল বলেছে। তবে স্থানীয় আইন ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নিকারাগুয়ায় মুসলমানদের অবস্থান খুব বেশি সুখকর ছিল না।

১৯৬০ ও ১৯৯০ সালে আরো দুইবারে বেশ কিছু আরব মুসলিম নিকারাগুয়ায় আগমন করে। ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের ভাষ্য মতে, ১৯৮৫ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০০, বর্তমানে তা তিন হাজারে পৌঁছেছে। ইসলাম নিকারাগুয়ার দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। কেননা দেশটিতে অভিবাসী মুসলমানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি স্থানীয়রাও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে।

১৯৯৯ সালে নিকারাগুয়ার সান জুয়ান শহরে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। যাতে এক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল প্রার্থনাকক্ষ ছাড়াও এতে আছে পাঠাগার, শিশুদের জন্য পৃথক স্থান, নারীদের পৃথক নামাজের স্থান, স্কুল, সভাকক্ষ, অফিসকক্ষ ইত্যাদি। কেন্দ্রটি স্প্যানিশ ভাষায় ইসলামী বই-পুস্তক অনুবাদ করে তা বিতরণ করে। এ ছাড়াও গ্রানাডা, মাসায়া, লিওন ও চিনান্দেগা শহরেও ছোট ছোট নামাজের স্থান আছে। নিকারাগুয়ার সামাজিক কাঠামোয় বিশ্বব্যাপী ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার প্রভাব থাকলেও অতীতের তুলনায় বর্তমানে মুসলিমরা অধিক ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে।