“আমার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা-মা’র মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেছিল। বাবা অন্য শহরে চলে যান। তিনি আমাকে, আমার যমজ ভাই ও আমার ছোট বোনকে মায়ের কাছে রেখে যান। আমার মা কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করতেন। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার সনদ ও পেশাগত দক্ষতা না থাকায় খুব কম বেতনে সন্তুষ্ট থাকতে হত তাকে। এ অবস্থা বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয়নি। ফলে জীবনের চাকা সচল রাখতে আমরা দাদার বাড়িতে গেলাম।” বলছিলেন মার্কিন নও-মুসলিম আবু হাদি।
আবু হাদি যখন খ্রিস্টান ছিলেন তখন পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার জন্য নিজের জগত ও সঙ্গীতের মধ্যে ডুবে থাকতেন। ক্লাসিক্যাল ও জাজ সঙ্গীত শুনতে শুনতে সঙ্গীতজ্ঞ হতে আগ্রহী হন তিনি। হাদি ১২ বছর বয়সে প্রথমবারের মত গিটার কেনেন। গিটার বাজানোর অনুশীলন করতে করতে তার আঙ্গুলে ব্যথা অনুভব করতেন।
গিটারের প্রতি হাদির উন্মাদনাময় আকর্ষণ দেখে তা থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন তার দাদা। রোববার ভোরে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে যেতেন গির্জায়। গির্জায় যেতে তার ভালোই লাগতো। সেখানে তিনি অনেক বন্ধু পেয়ে যান এবং দীর্ঘ আলোচনা হত খ্রিস্ট ধর্ম ও দর্শন নিয়ে। গির্জার পাদ্রি ছিলেন স্রস্টা তত্ত্ব বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু সনদ তার ছিল। আলোচনার মধ্য দিয়ে হাদি এটা বুঝতে পারেন যে খ্রিস্ট ধর্মের মাধ্যমে নতুন কিছু জানা সম্ভব নয় এবং তার মনের নানা প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছে না এই ধর্ম। হাদি গির্জায় যাওয়া অব্যাহত রাখলেও সঙ্গীতের প্রতি তার আকর্ষণ তাতে কমেনি। অবশেষে তিনি বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন একটি সঙ্গীত-গ্রুপ। এরপরের ঘটনা সম্পর্কে মার্কিন নওমুসলিম আবু হাদি বলেছেন:
“সঙ্গীত গ্রুপের সদস্য হওয়ার পর গির্জা ও ধর্মের কথা মন থেকে মুছে ফেললাম। স্থানীয় পার্টিগুলোতে গিটার বাজাতাম। এইসব পার্টিতে মদ ও মাদকদ্রব্যের মত কিছু নিষিদ্ধ বিষয়েরও চর্চা হত। আমি পরে আমার গ্রুপের সদস্য বা বন্ধুদের আচরণ বিশ্লেষণ করতাম। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে কোথাও যেন ভুল হচ্ছে। এই পরিবেশকে হজম করতে পারছিলাম না ও নিজেকে গ্রুপের মধ্যে একা বা বিচ্ছিন্ন বলে অনুভব করছিলাম। অনুভব করছিলাম যে রসাতলে যাচ্ছি বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।”
মিউজিক গ্রুপের সদস্য হওয়া ছিল আবু হাদির একটি বড় স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরও আত্মিক প্রশান্তির অভাব অনুভব করতেন তিনি। বস্তুগত সমৃদ্ধি আর কামনা-বাসনার মধ্যে ডুবে থেকেও তার মনের শূন্যতা ও অন্ধকার দিকটি তাকে পীড়া দিচ্ছিল। বস্তুগত সব সুখ তার কাছে মরীচিকার মতই ঠেকছিল। এইসব অতৃপ্তিকে ভুলে থাকার জন্য তিনি বেশি বেশি মদ পান করার, আমোদ-ফুর্তি করার ও গান-বাজনায় ডুবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হল না। সেই সময়ের মানসিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে মার্কিন নও-মুসলিম হাদি বলেছেন:
“সব কিছুই আমার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খোশালাপ, সঙ্গীত চর্চা ও নতুন নতুন সঙ্গীত বা সুর রচনায় আর আগের মত আনন্দ পেতাম না। বেশিরভাগ সময় চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকলাম। সেই সময়কার শেষের দিকে একদিন হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা বা দোয়ায় মশগুল হলাম। প্রায় দুই বছর ধরে এভাবে প্রার্থনা করেছি। স্রস্টাকে বললাম: আমি জানি না, কিসে আমার মঙ্গল? তাঁর কাছে চাইলাম তিনি যেন আমাকে সঠিক পথ দেখান ও এমন পথ দেখান যা আমার বিষণ্ণতাকে দূর করবে এবং আমাকে এই ইহ-জগতে ও মৃত্যুর পর সফল করবে।”
এভাবে আবু হাদি সঠিক পথ পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেন। এরিমধ্যে তার মায়ের মুসলমান হওয়ার খবর তার জন্য নতুন পথ খুলে দেয়। ফলে হাদি শুরু করেন ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
“আমার বয়স যখন ১৫ বছর তখন আমার মা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম সম্পর্কিত কয়েকটি ক্লাসে অংশ নিয়েছিলেন। এর কিছুকাল পর তিনি মুসলমান হয়ে যান। তিনি দুই-তিন বার আমার সঙ্গেও ইসলাম সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। কিন্তু মা মুসলমান হওয়ার পর তার যে দিকগুলো আমার দৃষ্টিকে বেশি আকৃষ্ট করে তা হল, তার অমায়িক আচার-আচরণ এবং অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের বিশ্বাস বা ঈমানের ওপর অবিচল থাকা। তার ওই পরিবর্তনই আমার মনের মধ্যে ইসলামের বীজ বপন করেছিল যা আমি তখনও জানতাম না। মুসলমান হওয়ার তিন বছর পর মা হিজাব পরতে থাকেন। এ বিষয়টিও ছিল আমার জন্য খুবই লক্ষণীয়। কারণ, আমাদের অঞ্চলে তখনও হিজাব পরিহিতা নারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। মা ছিলেন একটি বড় ও বিখ্যাত হাসপাতালের নার্স। তাকে এই হিজাবের ব্যাপারে সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে হয়েছে। এ অবস্থায় আমি ইসলাম নিয়ে গবেষণা শুরু করি।”
মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত আবু হাদি নানা ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করতে থাকেন। আর ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হন তিনি। ফলে তিনি এ বিষয়ে মায়ের সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাদি এ সম্পর্কে বলেছেন: ইসলামকে বোঝার ব্যাপারে মায়ের সাহায্য চাওয়ায় তিনি তার পরিচিত এক মুসলমানের কাছে আমাকে নিয়ে যান। ওই মুসলিম ভদ্রলোকের নাম হল মুহাম্মাদ। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজির ওপর তার পুরোপুরি দখল ছিল। প্রায় শতভাগ বিশুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলতে পারতেন জনাব মুহাম্মাদ। তিনি আমায় প্রশ্ন করেন: আপনি কি আল্লাহ বা স্রস্টায় বিশ্বাস করেন? আমি বললাম: জি। তিনি বললেন: আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী? বললাম: আমি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি তবে এখন আর গির্জায় যাই না। প্রশ্ন করলেন: কেন যান না? আমি ভেবেছিলাম গির্জায় যাই না শুনে মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে তিনি খুশি হবেন। কিন্তু তিনি সেরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে এর কারণ জানতে চাওয়ায় আমি ব্যাখ্যা দিয়ে জানাই যে খ্রিস্ট ধর্মের কোনো কোনো বিশ্বাস যেমন, তিন স্রস্টার অস্তিত্ব বা ত্রিত্ববাদ এবং জন্মগতভাবেই মানুষের পাপী হওয়ার বিষয় সম্পর্কে আমার আপত্তি বা প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারো কাছ থেকে পাইনি। এ ছাড়াও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসরণ আমার প্রাত্যহিক জীবনের ওপর কোনো প্রভাব রাখেনি। তাই একটি সঙ্গীত গ্রুপের সদস্য হয়েছি এবং গির্জায় আর যাচ্ছি না। ত্রিত্ববাদসহ বাইবেলের অনেক কিছুর ওপরই আমার বিশ্বাস না থাকার কথাও তাকে জানাই। তিনি বললেন:
‘আপনার বাপদাদার ধর্মই আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ নয়। তাকে পাওয়ার অন্য পথও রয়েছে। আমি ইসলাম সম্পর্কে আপনার সঙ্গে কথা বলব। আপনার দৃষ্টিতে এ ধর্ম যদি যৌক্তিক বলে মনে হয় এবং এতে কোনো দুর্বল দিক না দেখে থাকেন তাহলে এ ধর্ম সম্পর্কে আরো গভীরভাবে ভেবে দেখবেন।’
জনাব মুহাম্মাদের সঙ্গে আলোচনার পর আবু হাদি ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আরো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আবু হাদি মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত একত্ববাদ বা তাওহিদ, নবুওয়্যাত, নামাজ ও অন্য অনেক ইসলামী বিষয় নিয়ে মুহাম্মাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনা পরদিন ভোর চারটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অনেক চেষ্টা করেও হাদি ইসলামের কোনো দুর্বল দিক আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হন। হাদি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “মুহাম্মাদ খুবই সহজ ও স্পষ্ট কথা বলছিলেন। তার সব কথাই ছিল যৌক্তিক। তার বক্তব্যের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কিত সব সমস্যা বা প্রশ্নগুলোর সমাধান পেলাম। ফলে আমার আর কোনো প্রশ্ন ছিল না। সেই রাতের আলোচনার পর আরো গভীরভাবে গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে চিনতে সক্ষম হই এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য শাহাদাতাইন পাঠ করি। এরপর স্টুডিওতে ফিরে যাই।
সেখানে আমার সহযোগীদের বললাম,আমি আর ফিরে আসব না, তোমরা অন্য একজন গিটারবাদক খুঁজে নাও। এরপর থেকে আর কখনও স্টুডিওমুখি হইনি। সেই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার ঈমান আরো শক্তিশালী হয়েছে। আলহামদুল্লিাহ (মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আগস্ট 15 2023
মনের শূন্যতা ও অন্ধকার দূর করতে মুসলমান হন মার্কিন নাগরিক ‘আবু হাদি’
“আমার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা-মা’র মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেছিল। বাবা অন্য শহরে চলে যান। তিনি আমাকে, আমার যমজ ভাই ও আমার ছোট বোনকে মায়ের কাছে রেখে যান। আমার মা কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করতেন। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার সনদ ও পেশাগত দক্ষতা না থাকায় খুব কম বেতনে সন্তুষ্ট থাকতে হত তাকে। এ অবস্থা বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয়নি। ফলে জীবনের চাকা সচল রাখতে আমরা দাদার বাড়িতে গেলাম।” বলছিলেন মার্কিন নও-মুসলিম আবু হাদি।
আবু হাদি যখন খ্রিস্টান ছিলেন তখন পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার জন্য নিজের জগত ও সঙ্গীতের মধ্যে ডুবে থাকতেন। ক্লাসিক্যাল ও জাজ সঙ্গীত শুনতে শুনতে সঙ্গীতজ্ঞ হতে আগ্রহী হন তিনি। হাদি ১২ বছর বয়সে প্রথমবারের মত গিটার কেনেন। গিটার বাজানোর অনুশীলন করতে করতে তার আঙ্গুলে ব্যথা অনুভব করতেন।
গিটারের প্রতি হাদির উন্মাদনাময় আকর্ষণ দেখে তা থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন তার দাদা। রোববার ভোরে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে যেতেন গির্জায়। গির্জায় যেতে তার ভালোই লাগতো। সেখানে তিনি অনেক বন্ধু পেয়ে যান এবং দীর্ঘ আলোচনা হত খ্রিস্ট ধর্ম ও দর্শন নিয়ে। গির্জার পাদ্রি ছিলেন স্রস্টা তত্ত্ব বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু সনদ তার ছিল। আলোচনার মধ্য দিয়ে হাদি এটা বুঝতে পারেন যে খ্রিস্ট ধর্মের মাধ্যমে নতুন কিছু জানা সম্ভব নয় এবং তার মনের নানা প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছে না এই ধর্ম। হাদি গির্জায় যাওয়া অব্যাহত রাখলেও সঙ্গীতের প্রতি তার আকর্ষণ তাতে কমেনি। অবশেষে তিনি বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন একটি সঙ্গীত-গ্রুপ। এরপরের ঘটনা সম্পর্কে মার্কিন নওমুসলিম আবু হাদি বলেছেন:
“সঙ্গীত গ্রুপের সদস্য হওয়ার পর গির্জা ও ধর্মের কথা মন থেকে মুছে ফেললাম। স্থানীয় পার্টিগুলোতে গিটার বাজাতাম। এইসব পার্টিতে মদ ও মাদকদ্রব্যের মত কিছু নিষিদ্ধ বিষয়েরও চর্চা হত। আমি পরে আমার গ্রুপের সদস্য বা বন্ধুদের আচরণ বিশ্লেষণ করতাম। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে কোথাও যেন ভুল হচ্ছে। এই পরিবেশকে হজম করতে পারছিলাম না ও নিজেকে গ্রুপের মধ্যে একা বা বিচ্ছিন্ন বলে অনুভব করছিলাম। অনুভব করছিলাম যে রসাতলে যাচ্ছি বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।”
মিউজিক গ্রুপের সদস্য হওয়া ছিল আবু হাদির একটি বড় স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরও আত্মিক প্রশান্তির অভাব অনুভব করতেন তিনি। বস্তুগত সমৃদ্ধি আর কামনা-বাসনার মধ্যে ডুবে থেকেও তার মনের শূন্যতা ও অন্ধকার দিকটি তাকে পীড়া দিচ্ছিল। বস্তুগত সব সুখ তার কাছে মরীচিকার মতই ঠেকছিল। এইসব অতৃপ্তিকে ভুলে থাকার জন্য তিনি বেশি বেশি মদ পান করার, আমোদ-ফুর্তি করার ও গান-বাজনায় ডুবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হল না। সেই সময়ের মানসিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে মার্কিন নও-মুসলিম হাদি বলেছেন:
“সব কিছুই আমার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খোশালাপ, সঙ্গীত চর্চা ও নতুন নতুন সঙ্গীত বা সুর রচনায় আর আগের মত আনন্দ পেতাম না। বেশিরভাগ সময় চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকলাম। সেই সময়কার শেষের দিকে একদিন হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা বা দোয়ায় মশগুল হলাম। প্রায় দুই বছর ধরে এভাবে প্রার্থনা করেছি। স্রস্টাকে বললাম: আমি জানি না, কিসে আমার মঙ্গল? তাঁর কাছে চাইলাম তিনি যেন আমাকে সঠিক পথ দেখান ও এমন পথ দেখান যা আমার বিষণ্ণতাকে দূর করবে এবং আমাকে এই ইহ-জগতে ও মৃত্যুর পর সফল করবে।”
এভাবে আবু হাদি সঠিক পথ পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেন। এরিমধ্যে তার মায়ের মুসলমান হওয়ার খবর তার জন্য নতুন পথ খুলে দেয়। ফলে হাদি শুরু করেন ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
“আমার বয়স যখন ১৫ বছর তখন আমার মা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম সম্পর্কিত কয়েকটি ক্লাসে অংশ নিয়েছিলেন। এর কিছুকাল পর তিনি মুসলমান হয়ে যান। তিনি দুই-তিন বার আমার সঙ্গেও ইসলাম সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। কিন্তু মা মুসলমান হওয়ার পর তার যে দিকগুলো আমার দৃষ্টিকে বেশি আকৃষ্ট করে তা হল, তার অমায়িক আচার-আচরণ এবং অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের বিশ্বাস বা ঈমানের ওপর অবিচল থাকা। তার ওই পরিবর্তনই আমার মনের মধ্যে ইসলামের বীজ বপন করেছিল যা আমি তখনও জানতাম না। মুসলমান হওয়ার তিন বছর পর মা হিজাব পরতে থাকেন। এ বিষয়টিও ছিল আমার জন্য খুবই লক্ষণীয়। কারণ, আমাদের অঞ্চলে তখনও হিজাব পরিহিতা নারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। মা ছিলেন একটি বড় ও বিখ্যাত হাসপাতালের নার্স। তাকে এই হিজাবের ব্যাপারে সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে হয়েছে। এ অবস্থায় আমি ইসলাম নিয়ে গবেষণা শুরু করি।”
মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত আবু হাদি নানা ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করতে থাকেন। আর ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হন তিনি। ফলে তিনি এ বিষয়ে মায়ের সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাদি এ সম্পর্কে বলেছেন: ইসলামকে বোঝার ব্যাপারে মায়ের সাহায্য চাওয়ায় তিনি তার পরিচিত এক মুসলমানের কাছে আমাকে নিয়ে যান। ওই মুসলিম ভদ্রলোকের নাম হল মুহাম্মাদ। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজির ওপর তার পুরোপুরি দখল ছিল। প্রায় শতভাগ বিশুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলতে পারতেন জনাব মুহাম্মাদ। তিনি আমায় প্রশ্ন করেন: আপনি কি আল্লাহ বা স্রস্টায় বিশ্বাস করেন? আমি বললাম: জি। তিনি বললেন: আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী? বললাম: আমি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিয়েছি তবে এখন আর গির্জায় যাই না। প্রশ্ন করলেন: কেন যান না? আমি ভেবেছিলাম গির্জায় যাই না শুনে মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে তিনি খুশি হবেন। কিন্তু তিনি সেরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে এর কারণ জানতে চাওয়ায় আমি ব্যাখ্যা দিয়ে জানাই যে খ্রিস্ট ধর্মের কোনো কোনো বিশ্বাস যেমন, তিন স্রস্টার অস্তিত্ব বা ত্রিত্ববাদ এবং জন্মগতভাবেই মানুষের পাপী হওয়ার বিষয় সম্পর্কে আমার আপত্তি বা প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারো কাছ থেকে পাইনি। এ ছাড়াও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসরণ আমার প্রাত্যহিক জীবনের ওপর কোনো প্রভাব রাখেনি। তাই একটি সঙ্গীত গ্রুপের সদস্য হয়েছি এবং গির্জায় আর যাচ্ছি না। ত্রিত্ববাদসহ বাইবেলের অনেক কিছুর ওপরই আমার বিশ্বাস না থাকার কথাও তাকে জানাই। তিনি বললেন:
‘আপনার বাপদাদার ধর্মই আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ নয়। তাকে পাওয়ার অন্য পথও রয়েছে। আমি ইসলাম সম্পর্কে আপনার সঙ্গে কথা বলব। আপনার দৃষ্টিতে এ ধর্ম যদি যৌক্তিক বলে মনে হয় এবং এতে কোনো দুর্বল দিক না দেখে থাকেন তাহলে এ ধর্ম সম্পর্কে আরো গভীরভাবে ভেবে দেখবেন।’
জনাব মুহাম্মাদের সঙ্গে আলোচনার পর আবু হাদি ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আরো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আবু হাদি মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত একত্ববাদ বা তাওহিদ, নবুওয়্যাত, নামাজ ও অন্য অনেক ইসলামী বিষয় নিয়ে মুহাম্মাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনা পরদিন ভোর চারটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অনেক চেষ্টা করেও হাদি ইসলামের কোনো দুর্বল দিক আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হন। হাদি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “মুহাম্মাদ খুবই সহজ ও স্পষ্ট কথা বলছিলেন। তার সব কথাই ছিল যৌক্তিক। তার বক্তব্যের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কিত সব সমস্যা বা প্রশ্নগুলোর সমাধান পেলাম। ফলে আমার আর কোনো প্রশ্ন ছিল না। সেই রাতের আলোচনার পর আরো গভীরভাবে গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে চিনতে সক্ষম হই এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য শাহাদাতাইন পাঠ করি। এরপর স্টুডিওতে ফিরে যাই।
সেখানে আমার সহযোগীদের বললাম,আমি আর ফিরে আসব না, তোমরা অন্য একজন গিটারবাদক খুঁজে নাও। এরপর থেকে আর কখনও স্টুডিওমুখি হইনি। সেই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার ঈমান আরো শক্তিশালী হয়েছে। আলহামদুল্লিাহ (মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
By bn • অন্যান্য, মুস্তাবাসেরিন পত্রিকা 0 • Tags: খ্রিস্টান, গিটার, জীবনের চাকা সচল, দাদা, মার্কিন নও-মুসলিম, মার্কিন নাগরিক, মুসলমান