কেমন ছিল মিসরীয়দের হজযাত্রীদের গতিপথ

কেমন ছিল মিসরীয়দের হজযাত্রীদের গতিপথ
কেমন ছিল মিসরীয়দের হজযাত্রীদের গতিপথ
মিসর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা অঞ্চলে মুসলিম বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। মিসরসহ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ইসলামী খেলাফতের শাসনাধীন হলে মিসর অত্র অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। আফ্রিকা অঞ্চলের সঙ্গে পবিত্র মক্কা-মদিনার যোগাযোগের মাধ্যমও ছিল মিসর। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে খ্রিস্টীয় ১৮ শতক পর্যন্ত লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, এমনকি মুসলিম স্পেনের হাজিরা মিসর হয়ে মক্কা-মদিনায় যেতেন।

হজের পথের বাঁকবদল

যুগে যুগে মিসরীয় হাজিদের গতিপথে পরিবর্তন এসেছে। ড. আলী আল গাব্বান লেখেন, প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত মিসরীয় হাজিরা চারটি পথ ব্যবহার করেছেন। সময়কালসহ চারটি পথের বিবরণ নিম্নরূপ—

১. ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে হিজরি পঞ্চম শতক : এ সময় হাজিরা দুটি পৃথক পথ ব্যবহার করে হজে যেতেন। তাঁরা প্রথমে আরব উপদ্বীপের ভেতর তথা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চল হয়ে লোহিত সাগরের উপকূলে উপস্থিত হতেন। এরপর তাঁরা মদিনার উপকণ্ঠ দিয়ে মক্কায় যেতেন।

 

২. হিজরি পঞ্চম শতক থেকে ৬৬৬ হিজরি : এ সময়ে হাজিরা স্থলপথ এড়িয়ে চলতেন। তাঁরা নৌযানে আরোহণ করে বর্তমান কেনায় যেতেন। সেখান থেকে দলবদ্ধ হয়ে ভূমধ্যসাগরের আয়জাব বন্দরে যেতেন।

আয়জাব থেকে জাহাজে হিজাজে যেতেন। 

৩. ৬৬৬ হিজরি থেকে ১৩ শতক : এ সময়ে প্রাচীন স্থলপথ পুনর্জীবিত হয়। মামলুক সুলতান জাহির বাইবার্সের নির্দেশে তা পুনর্জীবিত হয়। তিনি ৬৬৬ হিজরিতে পবিত্র কাবার গিলাফ প্রেরণ করেন, যা মাহমাল নামে পরিচিত ছিল। সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হাজিদের কাফেলা পাঠান, যা পৌঁছাতে দীর্ঘ এক মাস লেগেছিল।

 

তিনি আইজাব থেকে হিজাজে হাজিদের চলাচল নিষিদ্ধ করেন। মামলুক সুলতানরা মিসরীয় হজের পথে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলেন, যার বেশির ভাগ ছিল জনকল্যাণমূলক। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সর্বশেষ কাফেলাটি পাঠানো হয় ১৩০১ হিজরিতে।

 

৪. ১৩০১ হিজরি থেকে বর্তমান সময় : এ সময়ে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হওয়ায় হজযাত্রার প্রাচীন ধারণাও পাল্টে যায়। মিসর থেকে স্থলপথে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। সুয়েজ খাল ব্যবহার করে হাজিরা নৌপথে হজে গমন করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিমান পরিষেবা শুরু হলে তা জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে বেশির ভাগ হজযাত্রী বিমানে হজে যান।

যদিও বর্তমানে মিসরের হাজিরা স্থলপথে হজে যান না। তবু সে সময়ের বহু স্মৃতি ও সংস্কার মিসরীয় সমাজে টিকে রয়েছে। স্থলপথে হজযাত্রার সময়ে মিসরের গ্রামগুলোতে মানুষ হাজিদের আপ্যায়ন ও সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকত। তারা হাজিদের মেহমান করতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। আবার যে পরিবারে সদস্য হজে যেত, তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে বাড়ির আঙিনা সাজিয়ে রাখত। বাড়ি সাজানোর এই রীতি এখনো মিসরীয় সমাজে রয়েছে।

সূত্র : আশ-শারকুল আউসাত