ইমামদের দৃষ্টিতে জিহ্বা বা মুখের ভাষা সংক্রান্ত অধিকার

ইমামদের দৃষ্টিতে জিহ্বা বা মুখের ভাষা সংক্রান্ত অধিকার
ইমামদের দৃষ্টিতে জিহ্বা বা মুখের ভাষা সংক্রান্ত অধিকার

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট যার জিহ্বাকে বা মুখের কথাকে মানুষ ভয় পায়। ইরানের প্রখ্যাত মুফাসসির হুজ্জাতুল ইসলাম মোহসেন কারায়াতির ভাষায়: মুখ দিয়ে খারাপ কথা বের করা কোনো মানুষের উচিত নয়।

কারায়াতি বলেন:

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মানুষের অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ৫০টিরও বেশি অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন যার একটি হচ্ছে জিহ্বা বা মুখের ভাষা সংক্রান্ত অধিকার।

কারায়াতির ভাষায়, জিহ্বার অন্যতম অধিকার হচ্ছে এই অঙ্গটি ব্যবহার করে কেউ যেন কাউকে গালিগালাজ কিংবা গালমন্দ না করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমার বাগযন্ত্রকে ভদ্রভাবে কথা বলতে বাধ্য করো। ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেন, যখন কথা বলবে, তখন আগে তোমার জিহ্বাকে সংযত রাখবে, যেখানে প্রয়োজন হবে কেবল সেখানেই কথা বলবে। শিয়া মুসলিম হাদিসসমূহের স্পষ্ট বর্ণনা মতে; মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার মুখের ভাষায়।

যাদের মুখের ভাষা খারাপ তাদের সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন:

মানুষ যেন কখনও গালমন্দ না করে, কাউকে অভিশাপ না দেয়। মহান আল্লাহ যেমন অভিশাপ পছন্দ করেন না তেমনি যে অভিশাপ দেয় এবং যে তা আগ্রহ নিয়ে শোনে তাকেও অপছন্দ করেন। দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষ আছে যারা গালি দেয়া ছাড়া কথাই বলতে পারে না। কেউ কেউ আবার গালিগালাজকে ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ মনে করে। তারা ভাবে, যত বেশি গালি দেওয়া যাবে তত বেশি তার শক্তিমত্তা প্রকাশ পাবে।

বর্ণনায় এসেছে, একবার ইমাম সাদেক (আ.) সামাআহ নামক এক ব্যক্তির কাছে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি তোমার উট পালকদের সারাক্ষণ গালিগালাজ করো কেন? সে উত্তর দিল: তারা আমার সঙ্গে দুব্যবহার করে হুজুর। এটা ঠিক যে সে গরীব মানুষ, উট চড়িয়ে খায় কিন্তু আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। যেহেতু সে দুর্ব্যবহার করেছে তাই তাকে আমি গালি দিয়েছি। একথা শুনে হযরত বলেন:

সে তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেও তুমি যে কথা বলেছো তা ছিল আরও খারাপ। যে ব্যক্তি খারাপ ভাষা ব্যবহার করে আল্লাহ তায়ালা তার জীবন থেকে বরকত তুলে নেন, তার জীবন বরকতহীন হয়ে যায়।

কেউ যদি আপনাকে গালি দিয়ে থাকে তাহলে তাকেও গালি দিয়ে জবাব দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন কারায়াতি। তিনি বলেন: শিয়াদের প্রথম ইমাম আলী (আ.) একজন জানতে পারে যে, এক ব্যক্তি তাঁর সাহাবী কাম্বারকে গালি দিয়েছে। এ সময় কাম্বার ওই ব্যক্তিকে জবাব দিতে উদ্যত হলে হযরত তাকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন: কাম্বার থামো! তাকে ছেড়ে দাও। জবাব দিও না। কাম্বার বলল: হযরত, সে আমাকে গালি দিয়েছে। হযরত বলেন: সে দিয়েছে দিক তুমি তাকে গালি দিও না। তুমি যদি উত্তেজিত হয়ে যাও এবং গালি দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয় তাহলেও নিজেকে সংযত করো। যদি তা করতে পারো তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং শয়তান ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হবে।

ইরানের প্রখ্যাত মুফাসসির হুজ্জাতুল ইসলাম কারায়াতি অপরকে গালমন্দ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন: কেউ যদি কাউকে গালি দিতে শোনে এবং তা এসএমএস করে অন্যদেরকে এই বলে জানায় যে, অমুক অমুককে এই কথা বলেছে তাহলে বুঝতে হবে সে নিজেও গালিগালাজ করা পছন্দ করে। অপরের খারাপ কথা বর্ণনা করারও অধিকার আমাদের নেই।

হাদিসে এসেছে, যদি কেউ অপরের গালিগালাজ আরেকজনের কাছে বর্ণনা করে তাহলে তাও গুনাহের মধ্যে পড়ে।

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট যার জিহ্বাকে বা মুখের কথাকে মানুষ ভয় পায়। স্ত্রী যেন তার স্বামীকে ভয় না পায়, স্বামীও যেন তার স্ত্রীকে ভয় না পায়।

মানুষের উচিত তার মুখের ভাষাকে ভদ্রচিত করা- একথা উল্লেখ করে কারায়াতি বলেন, মানুষের উচিত নয় তার মুখ দিয়ে খারাপ শব্দ উচ্চারণ করা।