কানাডীয় নও-মুসলিম মিস্টার ‘নিইল’-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরব।
নও-মুসলিম নিইল পরিপূর্ণ দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে দূরদর্শিতা নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন যদিও তাকে প্রাথমিকভাবে আকৃষ্ট করেছিল এ ধর্মের শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত মুসলমানদের গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “আমি এখন যে ধরনের প্রশান্তি ও স্বস্তি অনুভব করছি এর আগে কখনও সেরকমটি অনুভব করিনি। আপনার যদি অনেক বন্ধু থাকে যারা সব সময় আপনাকে সাহায্য করবে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন না? ঠিক সেভাবেই সব সময়ই একজন আপনাকে সাহায্য করছে বলে আপনি জানেন তাহলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করবেন বলেই আমি নিশ্চিত। এখন আমার অনেক ভাইবোন রয়েছে যারা আমাকে ভালোবাসে ও আমাকে সাহায্য করে এবং তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে আমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন ও আল্লাহর দিকে ঘনিষ্ঠ করেন। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী সব মুসলমানই একে-অপরের ভাই এবং সমান অধিকার রাখেন। তাদের মধ্যে কোনা পার্থক্য নেই। বর্তমানে বিশ্বের ১৫০ কোটিরও বেশি মুসলমান রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। আর এ বিষয়টি আমাকে খুবই প্রশান্তি দেয়। মহান আল্লাহকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তিনি আমাকে সুপথ দেখিয়েছেন এবং ইসলামে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে আমার চোখকে দিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি।”
কানাডীয় নও-মুসলিম নিইল যখন হাইস্কুলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তখন তিনি ইসলাম সম্পর্কে একটি বই পড়ার মাধ্যমে এ ধর্ম সম্পর্কে প্রথমবারের মতো কিছু ধারণা অর্জন করেন। এ বই পড়ার ফলে জীবনের বাস্তবতা বা সত্য সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ওই বইটি পড়ার আগে আল্লাহ সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করিনি এবং জীবনের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। এই বই পড়ার ফলে আমি স্রস্টাকে চেনার ও সত্যকে জানার প্রচেষ্টা শুরু করি।”
এক আল্লাহয় বা একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে। এ অবস্থায় মানব জীবন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন নয় বলে মনে করেন মুমিনরা। সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বিশ্বাসীরা। তারা সব সময় হাসিমুখে থাকেন এবং আল্লাহর নির্দেশগুলো মেনে চলেন। এ ছাড়াও তারা অন্য মুমিন ভাইদের অভাব পূরণের চেষ্টা করেন। আর এইসব কাজে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকেন। অবশ্য আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কারণে তারা ঘর-সংসার ছেড়ে দেন না।
মানুষের জীবনে ঈমানের প্রভাব সম্পর্কে কানাডীয় নও-মুসলিম নিইল বলেছেন: “মুসলমানদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করে আমি বিস্মিত হয়েছি। তাদের প্রতিজ্ঞাগুলো খুবই শক্তিশালী ও কার্যকর। কোনো কিছুই তাদের দুর্বল করে না। আল্লাহর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ইসলাম বলে প্রত্যেক মুসলমানই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেন। আর এই সম্পর্কের কারণেই সংকটের মোকাবেলায় তারা বেশি প্রতিরোধ করতে পারেন এবং বেশি ধৈর্যশীল। ঘরে, কার্যালয়ে, পথে-ঘাটে ও সব স্থানেই আল্লাহর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বজায় থাকে। এমনকি মানুষ তার দৈনন্দিন কাজগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে পারেন। আর এটাই আল্লাহর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক। মানুষ যখন নিজ বাসভবনে যান তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য ওই ভবনকে গোটা পরিবারের জন্য করবে প্রশান্তি, আনন্দ ও সুখের নীড়। মানুষ পরিবারের সব সদস্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ও তাদের প্রতি হাসিমুখে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। তাই এটা স্পষ্ট যে ইসলাম একটি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ধর্ম। এই ধর্ম মানুষকে কর্মমুখি ও গতিশীল হতে বলে এবং উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনাহীন জীবন থেকে মুক্ত করে।”
নও-মুসলিম নিইল ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে প্রাথমিক পরিচয় লাভের পর টরেন্টো সফর করেন। তার মতে এই সফর তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: “টরেন্টো সফর ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। এই শহর আমার জন্য সুখের স্মৃতির স্মারক হয়ে আছে। তবে এর কারণ এই নয় যে, এখানে অনেক সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বরং এর কারণ হল, আমি এখানেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম। যখন এই শহরে এসেছিলাম, তখন আমি জানতাম না যে, এই সফর আমার জীবনে কত গভীর প্রভাব রাখবে। এই শহরে আমি এমন একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যিনি আমার জীবনের ওপর গভীর প্রভাব রেখেছেন। এই মুসলিম ভদ্রলোকের কাছ থেকে আমি ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আর এইসব তথ্যের সুবাদেই আমি মুসলমান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। এভাবে আমি যেন দ্বিতীয়বার জন্ম নিয়েছি। ইসলাম গ্রহণের পর আমি নামার নতুন নাম হিসেবে মালেক মোহাম্মাদ হাসান নামটি বেছে নিয়েছি।”
“মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে তিনি আমাকে মুসলমানদের সঙ্গে পরিচিত করেছেন। যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমার মুসলমান হওয়ার কাহিনী অন্যদের জন্য লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখন আমি বেশ গর্ব অনুভব করি। যারাই আমার জীবনী পড়বেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ হল, ইসলাম বিরোধীদের চাকচিক্যময় কথা শুনে তারা যেন প্রতারিত না হন। বরং তারা যেন নিজেই ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন এবং প্রকৃত মুসলমানদের কাছেই ইসলাম বিষয়ক প্রশ্ন করেন।”
কানাডীয় নও-মুসলিম নিইলের মতে, ইসলামের প্রতি তার আকৃষ্ট হওয়ার একটি বড় কারণ হল- এ ধর্মের শিক্ষাগুলো মানুষের জীবনের সব দিকের জন্যই কল্যাণকর ও সবক্ষেত্রেই পথ-নির্দেশনা দেখায়। তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা ও সার্বজনীনতার দিকটিকে উল্লেখ করেছেন বেশ জোর দিয়ে। নিইল মনে করেন, ইসলামের শিক্ষা এমনই যে তা মানুষকে কোনঠাসা বা একঘরে অবস্থা থেকে মুক্ত করে ও মানুষকে নিয়ে আসে সমাজের ভেতরে। নিইলের মতে, ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব হল এ ধর্ম জীবন-কেন্দ্রীক ধর্ম। এ ধর্ম কেবলই আনুষ্ঠানিক কিছু ইবাদত ও খোদা-প্রেমের সাধনা নিয়ে ব্যস্ত নয়। ইসলাম যে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয় তার প্রমাণ হল হজ্ব, জামাআতে নামাজ পড়া, জুমার নামাজ ইত্যাদি।
ইসলাম এমন এক ধর্ম যা প্রাত্যহিক কাজকর্ম থেকেও আধ্যাত্মিক কল্যাণের সুযোগ দিয়েছে। যেমন, ইসলাম জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়-উপার্জনকে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে মনে করে। একইসঙ্গে ইসলাম আধ্যাত্মিক কাজ বা ইবাদত থেকেও বস্তুগত কল্যাণ হাসিলের ব্যবস্থা করেছে কখনও কখনও। যেমন, ইসলাম গভীর রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি বলেছে, এই নামাজ পড়ার মাধ্যমে বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সর্বোত্তম কল্যাণগুলো হাসিল কর।
নও-মুসলিম নিইল বলেছেন, ইসলাম এক জীবন্ত ধর্ম। ইসলাম মানুষকে ঘরকুণো করে না। ইসলাম মানুষকে সমাজে টেনে আনে। অন্যদের সঙ্গে আচার-আচারণ বা লেন-দেন বিষয়ে এ ধর্ম দিয়েছে সর্বোত্তম বিধান। ইসলাম কল্যাণকর ও সুন্দর আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ও হাসি মুখে থাকতে বলে। সত্যিই এটা এমন এক ধর্ম যা মানুষের সব চাহিদাগুলো মেটায় ও সব বিষয়ে বিধান দিয়েছে।”
সবশেষে নিইল বলেছেন, “ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা খুবই সহজ। আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মাদ (সা.)’র রেসালাতকে স্বীকৃতি মৌখিক স্বীকৃতি দিলেই মুসলিম সমাজের সদস্য হওয়া যায়। কিন্তু মুসলমানের মূল কাজ হল ইসলামের বিধানগুলো সঠিকভাবে জানা ও খোদায়ী পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হওয়া। এমনও হতে পারে যে একজন মুসলমান ইসলামের সব বিধানগুলোই জানেন, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তথা ওইসব বিধান পালনের ক্ষেত্রে তার অনেক ভুল-ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে। ফলে সে ঐশী পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে না।”
ডিসে. 30 2023
ইসলাম একটি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ধর্ম: কানাডীয় নও-মুসলিম নিইল
কানাডীয় নও-মুসলিম মিস্টার ‘নিইল’-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরব।
নও-মুসলিম নিইল পরিপূর্ণ দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে দূরদর্শিতা নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন যদিও তাকে প্রাথমিকভাবে আকৃষ্ট করেছিল এ ধর্মের শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত মুসলমানদের গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “আমি এখন যে ধরনের প্রশান্তি ও স্বস্তি অনুভব করছি এর আগে কখনও সেরকমটি অনুভব করিনি। আপনার যদি অনেক বন্ধু থাকে যারা সব সময় আপনাকে সাহায্য করবে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন না? ঠিক সেভাবেই সব সময়ই একজন আপনাকে সাহায্য করছে বলে আপনি জানেন তাহলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করবেন বলেই আমি নিশ্চিত। এখন আমার অনেক ভাইবোন রয়েছে যারা আমাকে ভালোবাসে ও আমাকে সাহায্য করে এবং তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে আমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন ও আল্লাহর দিকে ঘনিষ্ঠ করেন। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী সব মুসলমানই একে-অপরের ভাই এবং সমান অধিকার রাখেন। তাদের মধ্যে কোনা পার্থক্য নেই। বর্তমানে বিশ্বের ১৫০ কোটিরও বেশি মুসলমান রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। আর এ বিষয়টি আমাকে খুবই প্রশান্তি দেয়। মহান আল্লাহকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তিনি আমাকে সুপথ দেখিয়েছেন এবং ইসলামে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে আমার চোখকে দিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি।”
কানাডীয় নও-মুসলিম নিইল যখন হাইস্কুলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তখন তিনি ইসলাম সম্পর্কে একটি বই পড়ার মাধ্যমে এ ধর্ম সম্পর্কে প্রথমবারের মতো কিছু ধারণা অর্জন করেন। এ বই পড়ার ফলে জীবনের বাস্তবতা বা সত্য সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ওই বইটি পড়ার আগে আল্লাহ সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করিনি এবং জীবনের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। এই বই পড়ার ফলে আমি স্রস্টাকে চেনার ও সত্যকে জানার প্রচেষ্টা শুরু করি।”
এক আল্লাহয় বা একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে। এ অবস্থায় মানব জীবন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন নয় বলে মনে করেন মুমিনরা। সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বিশ্বাসীরা। তারা সব সময় হাসিমুখে থাকেন এবং আল্লাহর নির্দেশগুলো মেনে চলেন। এ ছাড়াও তারা অন্য মুমিন ভাইদের অভাব পূরণের চেষ্টা করেন। আর এইসব কাজে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকেন। অবশ্য আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কারণে তারা ঘর-সংসার ছেড়ে দেন না।
মানুষের জীবনে ঈমানের প্রভাব সম্পর্কে কানাডীয় নও-মুসলিম নিইল বলেছেন: “মুসলমানদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করে আমি বিস্মিত হয়েছি। তাদের প্রতিজ্ঞাগুলো খুবই শক্তিশালী ও কার্যকর। কোনো কিছুই তাদের দুর্বল করে না। আল্লাহর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ইসলাম বলে প্রত্যেক মুসলমানই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেন। আর এই সম্পর্কের কারণেই সংকটের মোকাবেলায় তারা বেশি প্রতিরোধ করতে পারেন এবং বেশি ধৈর্যশীল। ঘরে, কার্যালয়ে, পথে-ঘাটে ও সব স্থানেই আল্লাহর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বজায় থাকে। এমনকি মানুষ তার দৈনন্দিন কাজগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে পারেন। আর এটাই আল্লাহর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক। মানুষ যখন নিজ বাসভবনে যান তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য ওই ভবনকে গোটা পরিবারের জন্য করবে প্রশান্তি, আনন্দ ও সুখের নীড়। মানুষ পরিবারের সব সদস্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ও তাদের প্রতি হাসিমুখে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। তাই এটা স্পষ্ট যে ইসলাম একটি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ধর্ম। এই ধর্ম মানুষকে কর্মমুখি ও গতিশীল হতে বলে এবং উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনাহীন জীবন থেকে মুক্ত করে।”
নও-মুসলিম নিইল ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে প্রাথমিক পরিচয় লাভের পর টরেন্টো সফর করেন। তার মতে এই সফর তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: “টরেন্টো সফর ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। এই শহর আমার জন্য সুখের স্মৃতির স্মারক হয়ে আছে। তবে এর কারণ এই নয় যে, এখানে অনেক সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বরং এর কারণ হল, আমি এখানেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম। যখন এই শহরে এসেছিলাম, তখন আমি জানতাম না যে, এই সফর আমার জীবনে কত গভীর প্রভাব রাখবে। এই শহরে আমি এমন একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যিনি আমার জীবনের ওপর গভীর প্রভাব রেখেছেন। এই মুসলিম ভদ্রলোকের কাছ থেকে আমি ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আর এইসব তথ্যের সুবাদেই আমি মুসলমান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। এভাবে আমি যেন দ্বিতীয়বার জন্ম নিয়েছি। ইসলাম গ্রহণের পর আমি নামার নতুন নাম হিসেবে মালেক মোহাম্মাদ হাসান নামটি বেছে নিয়েছি।”
“মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে তিনি আমাকে মুসলমানদের সঙ্গে পরিচিত করেছেন। যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমার মুসলমান হওয়ার কাহিনী অন্যদের জন্য লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখন আমি বেশ গর্ব অনুভব করি। যারাই আমার জীবনী পড়বেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ হল, ইসলাম বিরোধীদের চাকচিক্যময় কথা শুনে তারা যেন প্রতারিত না হন। বরং তারা যেন নিজেই ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন এবং প্রকৃত মুসলমানদের কাছেই ইসলাম বিষয়ক প্রশ্ন করেন।”
কানাডীয় নও-মুসলিম নিইলের মতে, ইসলামের প্রতি তার আকৃষ্ট হওয়ার একটি বড় কারণ হল- এ ধর্মের শিক্ষাগুলো মানুষের জীবনের সব দিকের জন্যই কল্যাণকর ও সবক্ষেত্রেই পথ-নির্দেশনা দেখায়। তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা ও সার্বজনীনতার দিকটিকে উল্লেখ করেছেন বেশ জোর দিয়ে। নিইল মনে করেন, ইসলামের শিক্ষা এমনই যে তা মানুষকে কোনঠাসা বা একঘরে অবস্থা থেকে মুক্ত করে ও মানুষকে নিয়ে আসে সমাজের ভেতরে। নিইলের মতে, ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব হল এ ধর্ম জীবন-কেন্দ্রীক ধর্ম। এ ধর্ম কেবলই আনুষ্ঠানিক কিছু ইবাদত ও খোদা-প্রেমের সাধনা নিয়ে ব্যস্ত নয়। ইসলাম যে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয় তার প্রমাণ হল হজ্ব, জামাআতে নামাজ পড়া, জুমার নামাজ ইত্যাদি।
ইসলাম এমন এক ধর্ম যা প্রাত্যহিক কাজকর্ম থেকেও আধ্যাত্মিক কল্যাণের সুযোগ দিয়েছে। যেমন, ইসলাম জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়-উপার্জনকে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে মনে করে। একইসঙ্গে ইসলাম আধ্যাত্মিক কাজ বা ইবাদত থেকেও বস্তুগত কল্যাণ হাসিলের ব্যবস্থা করেছে কখনও কখনও। যেমন, ইসলাম গভীর রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি বলেছে, এই নামাজ পড়ার মাধ্যমে বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সর্বোত্তম কল্যাণগুলো হাসিল কর।
নও-মুসলিম নিইল বলেছেন, ইসলাম এক জীবন্ত ধর্ম। ইসলাম মানুষকে ঘরকুণো করে না। ইসলাম মানুষকে সমাজে টেনে আনে। অন্যদের সঙ্গে আচার-আচারণ বা লেন-দেন বিষয়ে এ ধর্ম দিয়েছে সর্বোত্তম বিধান। ইসলাম কল্যাণকর ও সুন্দর আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ও হাসি মুখে থাকতে বলে। সত্যিই এটা এমন এক ধর্ম যা মানুষের সব চাহিদাগুলো মেটায় ও সব বিষয়ে বিধান দিয়েছে।”
সবশেষে নিইল বলেছেন, “ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা খুবই সহজ। আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মাদ (সা.)’র রেসালাতকে স্বীকৃতি মৌখিক স্বীকৃতি দিলেই মুসলিম সমাজের সদস্য হওয়া যায়। কিন্তু মুসলমানের মূল কাজ হল ইসলামের বিধানগুলো সঠিকভাবে জানা ও খোদায়ী পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হওয়া। এমনও হতে পারে যে একজন মুসলমান ইসলামের সব বিধানগুলোই জানেন, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তথা ওইসব বিধান পালনের ক্ষেত্রে তার অনেক ভুল-ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে। ফলে সে ঐশী পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে না।”
By bn • মুস্তাবসেরগণের জীবনী 0 • Tags: আল্লাহ, ইসলাম, ধর্ম, মুসলমান, শিক্ষা, স্বস্তি