কুরআন পথহারা মানুষকে দেখায় পথের দিশা: রুশ নওমুসলিম

কুরআন পথহারা মানুষকে দেখায় পথের দিশা: রুশ নওমুসলিম
কুরআন পথহারা মানুষকে দেখায় পথের দিশা: রুশ নওমুসলিম

‘আজ হোক বা কাল হোক প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন একটা সময় আসে যখন সে নিজের জন্য আত্মার খাদ্য জরুরি বলে অনুভব করে। আমার ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে এবং এভাবে আমি ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি।’- কথাটি বলেছেন রুশ নও-মুসলিম ‘রুসলান মালচেনভ’।

তিনি আরো বলেছেন: ‘কেউ যখন কোনো কিছুকে নিজের জন্য জরুরি বলে অনুভব করে তার অর্থ দাঁড়ায় এটা যে, তিনি সাধারণত এর মাধ্যমে কোনো সংকট থেকে মুক্ত হতে চান। কিন্তু ধর্ম কেবল কোনো একটি সংকটেরই সমাধান দেয় তা নয়, বরং তা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জীবনের জন্যও কল্যাণকর। ধর্ম হচ্ছে মানব জাতির প্রতি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। মনোবিজ্ঞানী ও সমাজ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষ ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনে এমন কিছুর মুখাপেক্ষী যে তারা ধর্মের মাধ্যমে সেইসব অর্জন করতে চায়। অন্য কথায় মানুষের এমন কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে যা ধর্ম ছাড়া অর্জন করা যায় না। বর্তমান বিশ্বে এ বিষয়টি অতীতের চেয়েও ব্যাপক মাত্রায় অনুভূত হচ্ছে। কারণ, বর্তমান যুগে মানুষ সময় ও স্থানের গণ্ডিগুলোকে সীমিত করতে চায়। মানুষ চায় একাকীত্ব হতে মুক্তি। এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা দেয়।’

রুশ নও-মুসলিম ‘রুসলান মালচেনভ’ আরো বলেছেন: “একজন খ্রিস্টান হওয়া সত্ত্বেও আমি গির্জায়ও যেতাম না এবং বাইবেল পড়ার প্রতিও আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। এমনকি আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়েও কখনও ভাবতাম না। কিন্তু এমন এক সময় আসল আমার জীবনে যখন আমি অনুভব করছিলাম যে আত্মিক বা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্য কথায় আমার আত্মা এমন কিছু বিষয়ের জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে যে এতদিন পর্যন্ত এসব বিষয়ে উদাসীন ছিলাম। আর তাই কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই বুকশেলফ থেকে বাইবেল নিয়ে তা পড়া শুরু করি। কিন্তু আমি যা খুঁজছিলাম তা পেলাম না এই বইয়ে। এরপর আমার মন এক নতুন বিষয়ে নিবদ্ধ হল এবং আমার মনে জেগে উঠল অসংখ্য প্রশ্ন। আমার অনুসন্ধিৎসু মন যেহেতু সত্যকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তাই আমি হতাশ না হয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখি। আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি রহস্য এবং আরো বিস্ময়ের বিষয় হিসেবে মানব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ভাবনা-চিন্তায় ডুবে গেলাম। বিশ্ব জগতের বিস্ময়কর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তাধারা বা ধারণাগুলো যতই নির্ভুল হয়ে উঠছিল ততই বড় ধরনের বাস্তবতা ধরা দিচ্ছিল আমার কাছে। অথচ এর আগে এসব বিষয়ে অসচেতন ছিলাম।”

রুশ নও-মুসলিম ‘রুসলান মালচেনভ’ আরো বলেছেন: “আমি বুঝতে পারছিলাম যে আল্লাহকে এসব বিস্ময়ের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে আমার জন্য দরকার ছিল একজন গাইড বা পথ-প্রদর্শক। অনুভব করছিলাম যে অজ্ঞাত বিষয়গুলোকে জানার জন্য সাহায্যকারী কোনো বিষয় বা ব্যক্তি দরকার। এভাবে কেটে গেল অনেক দিন রাত। অবশেষে শীতের কোনো এক সন্ধ্যায় ঘটল আনন্দদায়ক একটি ঘটনা।”

রুসলান এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, “সেদিন ছিলাম আমি খুবই ক্লান্ত ও অস্থির-চিত্ত। কোনো কাজ করারই ধৈর্য ছিল না। রেডিওটা চালু করলাম যাতে মনটা একটু প্রফুল্ল হয়। ঘুরাচ্ছিলাম নানা ফ্রিকোয়েন্সি বা বেতার তরঙ্গের মিটার। হঠাৎ একটা কণ্ঠ আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করল। সেটা ছিল ভিন্ন দেশ থেকে রুশ ভাষার একটি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের কণ্ঠদাতা পড়ে যাচ্ছিলেন একটি বিশেষ টেক্সট। বুঝতে পারলাম যে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুনছি। পাঠক বলে যাচ্ছিলেন হযরত মূসা নবীর (আ.) জীবনের বিস্ময়কর ঘটনা। গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনে গেলাম শেষ পর্যন্ত। পরে বুঝতে পারলাম এই অনুষ্ঠানটি ইসলাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার আকর্ষণীয় উৎস।”

রুসলান এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন: “এর আগে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। তাই এ ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলাম। তাই ওই রেডিও স্টেশনটির সম্প্রচারের সময় ও মিটার-ব্যান্ড, ফ্রিকুয়েন্সি ইত্যাদি নোট করে রাখলাম এবং ওই অনুষ্ঠান শুনে ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলাম। বিশেষ করে দয়াময় আল্লাহর অস্তিত্ব একের বেশি না হওয়া বা একত্ববাদ আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে। এই একত্ববাদ বা তৌহিদকেই ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য বলে মনে হয়েছে আমার। বিশ্বের বিস্ময়কর সব কিছুর স্রষ্টার প্রতি মানুষের মাথা নত করে সিজদা দেয়ার বিষয়টি কতই না বড় ব্যাপার। আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সব চাহিদা সম্পর্কে অবগত। গভীর সমুদ্রে ও স্থলভাগে থাকা ক্ষুদ্রতম জীব থেকে শুরু করে বৃহত্তম জন্তুর চাহিদা তিনিই মেটান। আমরা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তথা আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে জটিলতম বিস্ময়ের নানা জগত দেখতে পাই এবং এখনও মানব শরীরের অনেক রহস্য ও বিশেষ করে মানুষের মগজের অনেক রহস্যই বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে। ”

রুশ নও-মুসলিম ‘রুসলান মালচেনভ’ পবিত্র কুরআন পড়ে ইসলামের অনেক বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কুরআনের তুলে ধরা সত্যগুলোর মধ্যে অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেয়েছেন তিনি।

হেদায়াতের চির-অম্লান আলো কুরআন সব যুগের মানুষের জন্য পথ দেখায় এবং এ মহাগ্রন্থ সব সময়ই চির নতুন থাকে। এ এমন এক সাগর যার কোনো কুল-কিনারা নেই। এর আয়াতগুলোতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা সূত্র ও উৎস। কুরআন প্রেমিক সব সময় সম্মানের অধিকারী হন। রুসলান এ প্রসঙ্গে বলেছেন: কুরআন আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কুরআনের আয়াতগুলো জীবনের সুন্দরতম ধারণাগুলো দেয় মানুষকে। তাই আমি এ মহাগ্রন্থ পড়ে যাচ্ছি বেশ গুরুত্ব দিয়ে। আমার মতে কুরআনের শিক্ষাগুলো খুবই বাস্তব, অথচ এইসব আয়াত ১৪০০ বছর আগে নাজেল হয়েছে এবং এ মহাগ্রন্থ এ যুগের নানা সমস্যার সর্বোত্তম জবাব দেয়।

রুসলান আরো বলেছেন: ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল’-এই সুন্দর বাক্যটি আমি সব সময় উচ্চারণ করি। এই বাক্যটি আমাকে যোগায় মনোবল এবং যতবারই তা উচ্চারণ করি তা আমাকে আমার জীবনের প্রিয় লক্ষ্য ও আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

রুশ নওমুসলিম ‘রুসলান মালচেনভ’ মনে করেন এভাবেই কুরআন পথহারা মানুষকে দেখায় পথের দিশা এবং একমাত্র কুরআনই দেখাতে পারে মানুষকে মুক্তির পথ। ফলে রুসলান ইসলামকেই নিজের ধর্ম হিসেবে বেছে নেন। রুসলান এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আমার মতে, মানুষের উচিত জীবনে বিনম্র হওয়া ও পরিশ্রমী হওয়া এবং অত্যন্ত সাহস নিয়ে বিশ্বের নানা অসঙ্গতিকে সহ্য করা। কারণ, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের মহা-পুরস্কার দেবেন।

রুসলান মুসলমান হওয়ার পর নিজের নাম হিসেবে মুহাম্মাদ নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি সব শ্রোতার জন্য সাফল্য ও সব সত্য-সন্ধানীর জন্য সুপথ কামনা করেন।