ব্রিটিশ ও ইরানী জনগণের দারিদ্র সংক্রান্ত তূলনা মূলক আলোচনা

ব্রিটিশ ও ইরানী জনগণের দারিদ্র সংক্রান্ত তূলনা মূলক আলোচনা
ব্রিটিশ ও ইরানী জনগণের দারিদ্র সংক্রান্ত তূলনা মূলক আলোচনা
“ব্রিটেনে একবিংশ শতাব্দীতে ১৮ শতকের জীবন কাটাচ্ছে লক্ষাধিক শিশু ”  – এই শিরোনামে ২১/৮/২০২৩ ইনকিলাবের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে : 

* জ্বালানি, খাদ্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে জীবনযাত্রার মানে ভয়ঙ্কর পতন ঘটেছে যুক্তরাজ্যে । বিশেষ করে ব্রিটেনের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সমাজে।
* প্রায় দুই তৃতীয়াংশ পরিবারই শিশুদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করতে পারছে না ।
* ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং উত্তর স্কটল্যান্ড জুড়ে প্রায় ৬০% শিশু অত্যন্ত দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে ।
* প্রায় ৫৭% পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে ভুগছে ।
* গ্যাস ও বিদ্যুতের সামর্থ্য নেই ৫৮% পরিবারের ।
* মৌলিক আসবাব পত্র যেমন: বেড, সোফা এবং যন্ত্রপাতি নেই ৬৩% মানুষের।
* শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের জন্য আইটি সরঞ্জাম নেই ব্রিটেনের ৬৫% বাড়িতে।
* ৪৯% পরিবার তাদের বাসা ভাড়া বহন করতে সক্ষম নয় ।
এখন প্রশ্ন : এক সময়ের সূর্যাস্ত না যাওয়ার বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি, শিল্প , প্রযুক্তি ও জ্ঞান – বিজ্ঞানের পথিকৃত ধনী দেশ ও পারমাণবিক ও সামরিক পরাশক্তি ব্রিটেনের কেন এহেন চরম দুরাবস্থা ও দুর্গতি ? অথচ ইরানের মত ৪৪ – ৪৫ বছরের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া সার্বিক তাহরীমের ( নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ ) শিকার নয় ব্রিটেন ! বরং গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং  ব্যবস্থা আসলে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে । ২০০-৩০০ বছর ধরে বিশ্বের তাবৎ সম্পদ লুটপাট , শোষণ ও হস্তগত করে কেন ব্রিটেনের অর্ধেকের বেশি পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে ভুগছে এবং তাদের বিদ্যুত বিল পরিশোধ ও মৌলিক আসবাব পত্র ক্রয়ের সামর্থ্য সামর্থ্য নেই ? কেন ৬৫% ব্রিটিশ পরিবার শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের জন্য আইটি সরঞ্জাম বিহীন ? কেন ৪৯% ব্রিটিশ পরিবার বাড়িভাড়া দিতে অক্ষম ? কেন দুই তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ পরিবার শিশুদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করতে পারছে না ? কেন জ্বালানি খরচ জোগাতে না পেরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে মার্চ ২০২৩ এর শীত মৌসুমে  ঠাণ্ডায় ৭০০০ ব্রিটিশ নাগরিক মারা গেছে ?  
এ থেকে কি স্পষ্ট হয় না যে ব্রিটেনের অর্ধেকের বেশি পরিবার ও জনগণ দারিদ্রক্লিষ্ট ?!!
আর ইসরাইলী সংবাদ মাধ্যম ” জেরুজালেম পোস্ট ” – এ ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত শ্লোমোহ মাইতেলের প্রবন্ধ : ” Iran’s economy : world’s 11th largest GDP is strong but in crisis ” (  ইরানের অর্থনীতি : পৃথিবীর একাদশ বৃহত্তম জিডিপি শক্তিশালী তবে তা সংকটে ) – এ এক জায়গায় লেখা হয়েছে : ” Poverty is widespread. More than half the population lives below the poverty line অর্থাৎ (ইরানে) দারিদ্র ব্যাপক বিস্তৃত। অর্ধেকের বেশি জনগণ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। “
ধনী পরাশক্তি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রিটেনের অর্ধেকের বেশি পরিবার যদি দারিদ্রের কারণে খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে ভোগে , বিদ্যুত বিল পরিশোধের সামর্থ্য না রাখে , ঘরের আসবাব পত্র ( বেড, সোফা ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ) , শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য আইটি সরঞ্জাম বিহীন হয় এবং ৪৯% পরিবার যদি বাড়িভাড়া দিতে না পারে , প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ পরিবার যদি শিশুদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করতে না পারে তাহলে অতি সহজেই বোঝা যায় যে ৪৪ বছর ধরে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের শিকার ইরানের জনগণের অর্ধেকের বেশি কেন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে ?!!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ইরানী জনগণের অর্ধেকের বেশি  দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে বলে যে কথা উক্ত ইসরাইলী পত্রিকার প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে তা ইরান বিরোধী পশ্চিমা প্রচার মিডিয়ার বক্তব্য এবং তাই তা প্রমাণিত হতে হবে। আর বর্তমান ইরান সরকার ও প্রশাসন ইরানী জনগণের দারিদ্র  এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বেকারত্বের  সমস্যা সমাধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে । ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে ইসরাইলী দৈনিক জেরুজালেম পোস্টে প্রকাশিত উক্ত প্রবন্ধে বর্তমানে ইরানের জিডিপি প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ( দুই হাজার বিলিয়ন ) ডলার উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ দুই ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে ইরান বর্তমানে ( ২০২৩ সালে ) বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি । ২০২১ সালে ইরানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছিল ৪% এবং ২০২২ সালে আইএমএফের এক প্রতিবেদনে ১•৭৪ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে ইরানকে বিশ্বের চতুর্দশ বৃহত্তম অর্থনীতি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০২২ সালে বিশ্ব জিডিপি ছিল ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার। (ব্রিটেন ৩•৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে ২০২২ সালে ছিল বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২২ সালে ব্রিটিশ জিডিপি ছিল বিশ্ব জিডিপির ৩.৫৭% এবং ঐ বছর ইরানের জিডিপি ( ১•৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার ) ছিল বিশ্ব জিডিপির ১•৭৪ % । 
তাই দারিদ্র বিমোচনে ইরানের প্রচেষ্টা ফলপ্রসু হচ্ছে । আর ২০২২ সালে চতুর্দশ বৃহত্তম অর্থনীতির স্থান থেকে ২০২৩ সালে একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতির স্থানে উন্নীত হওয়া আসলেই এক বিরাট সাফল্য ছাড়া আর কিছু নয়। আর এ সাফল্য ইরান সরকারের দাবি নয় বরং ইরানের শত্রু ইসরাইলের প্রসিদ্ধ দৈনিক জেরুজালেম পোস্টের উক্ত প্রবন্ধে এবং আইএমএফের প্রতিবেদনেও প্রকাশিত হয়েছে। আর শত্রুরা প্রতিপক্ষের অনেক ইতিবাচক বাস্তবতা চেপে যায় ও প্রকাশ করে না । যা হোক এটা ইরানের সাফল্য যদিও আরো বহু পথ অতিক্রম করতে হবে। 
ব্রিটেনের যে অর্থনৈতিক চিত্র পাওয়া গেছে তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে দেশটির ( গ্রেট ব্রিটেন নাকি টাইনি অর্থাৎ ক্ষুদে ব্রিটেন ) অর্ধেকের বেশি পরিবার ও জনগণ একবিংশ শতাব্দীতে ১৮ শতকের দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে !!! ব্রিটেনের অনেক পরিবারের শিশুরা শীতকালে ঠাণ্ডা অন্ধকার বাড়িতে সময় কাটায় এবং স্কুলে তাদের কোন বন্ধু – বান্ধব নেই !!  
ইরানের ব্যাপারে নেতিবাচক বিষয়গুলো যত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বর্ণনা করে পশ্চিমা মিডিয়া ঠিক সেভাবে পশ্চিমা দেশগুলোয় বিদ্যমান ঐ একই নেতিবাচক বিষয়গুলো তারা বর্ণনা করে না । যত সমস্যা সব যেন একা ইরানের । আর পশ্চিমা দেশগুলোর যেন কোনো সমস্যাই নেই । ইরান যেন দারিদ্রের মহাসাগরে নিমজ্জিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে আর পশ্চিমা দেশগুলো যেমন : ব্রিটেন যেন ধন – সম্পদ , সুখ- স্বাচ্ছন্দ ও প্রবৃদ্ধির মহাসমুদ্রে শুধু অবগাহন আর অবগাহন করেই যাচ্ছে !! পশ্চিমা ও ইসরাইলী মিডিয়া  ঠিক এমন ভয়াল চিত্র ইরান সম্পর্কে সব সময় দিচ্ছে বিশ্বকে । 
আসল কথা হলো : ৬৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত ব্রিটেনের  অবস্থা ৮৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইরানের চাইতে ঢের খারাপ ও ভয়াল । কিন্তু মিডিয়ার প্রচার প্রোপাগান্ডার ঠেলায় ও চোট পাটে তা বোঝার উপায় নেই । 

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান।