ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) ইমামতিধারার ৮ম মাসুম ইমাম। তিনি ৭ম ইমাম মুসা কাজীমের (আ.) সন্তান। ইরানের মাশহাদ নগরীতে এ মহান ইমামের পবিত্র মাজার অবস্থিত। এখানে আমরা পাঠকদের উদ্দেশ্যে ইমাম রেজার (আ.) কতিপয় জ্ঞানগর্ভ বাণী তুলে ধরছি:
ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) থেকে অনেক জ্ঞানগর্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস বর্ণিত। যেগুলো সূর্যের কিরণের ন্যায় মানুষকে সত্য ও আলোর পথ দেখায়। এখানে আমরা এ সব হাদীসে কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি; যাতে সেগুলো পাঠ এবং নিজেদের বাস্তব জীবনে মেনে চলার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।
১- সে-ই প্রকৃত মু’মিন যে তিনটি বৈশিষ্ট্য যথাযথভাবে মেনে চলবে; যথা: আল্লাহর সুন্নত, রাসূলের (সা.) সুন্নত এবং ইমামগণের সুন্নত। আল্লাহর সুন্নত হল স্বীয় রহস্য গোপন রাখা; রাসূলের (সা.) সুন্নত হল মানুষের সাথে স্নেহপরায়ণ ও উত্তম আচরণ করা এবং ইমামগণের সুন্নত হল বিপদাপদে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতা অবলম্বন করা।
(দ্র: উসুলে কাফী, খন্ড ৩য়, পৃ.৩৩৯)
২- প্রত্যেক মানুষের জ্ঞান হল তার প্রকৃত বন্ধু এবং অজ্ঞতা হল শত্রু।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ. ৪৬৭)
৩- ইসলামের চেয়ে ঈমান এক স্তর উপরে এবং তাকওয়া ঈমানের চেয়ে এক স্তর উপরে। আর মানব জাতীকে বিশ্বাসের চেয়ে উচ্চতম কিছুই দান করা হয় নি।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৪- ইমাম রেজার (আ.) নিকট তাওয়াক্কুলের সংজ্ঞা জিজ্ঞাসা করা হয়; জবাবে তিনি বলেন: তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় না করা।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৫- ঈমানের চারটি স্তম্ভ রয়েছে; যথা: তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা রাখা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে মেনে চলা এবং যাবতীয় বিষয়াবলীকে আল্লাহর প্রতি সমার্পণ করা।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৬- ইমাম রেজার (আ.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সর্বোত্তম বান্দা কারা; জবাবে তিনি বলেন: যারা নেক কাজে আত্মতুষ্টি লাভ করে, অন্যায় করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে, যাদেরকে কিছু প্রদান করলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্রোধের সময় আত্মসংবরণ করে।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৭- যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের কষ্ট লাঘব করবে; আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার কষ্ট লাঘব করবেন।
(দ্র: উসুলে কাফী, ৩য় খন্ড, পৃ.২৬৮)
৮- কোরআন আল্লাহর রজ্জু এবং বেহেশত গমণের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। কোরআন মানুষকে দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ দেয়। কোরআন কখনও পুরাতন হবে না; কারণ এটি নির্দিষ্ট কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ আসমানী কিতাব মানুষকে খোদামূখী ও দিকনির্দেশনা দান করে। কোরআন সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং এতে কোন ভ্রান্ত বিষয় এটিকে স্পর্শ করতে পারবে না।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৯২তম খন্ড, পৃ.১৪)
৯- যদি বেহেশত ও দোজখের অস্তিত্ব নাও থাকত, তবুও আল্লাহর অভূরন্ত নেয়ামতের কারণে তার প্রতি অনুগত ও বাধ্য থাকা মানুষের দায়িত্ব।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৭১তম খন্ড, পৃ. ১৭৪)
১০- হিংসা ও লোভ থেকে বিরত থাকবে, এ দু’টি বিষয় অতীত জাতিসমূহের ধ্বংস ডেকে এনেছে। কৃপণতা কর না; কেননা কোন ঈমানদার ব্যক্তি কৃপণ হতে পারে না।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৭৮তম খন্ড, পৃ. ৩৪৬)
১১- আল্লাহ তিনটি বিষয়কে অপর তিনটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করেছে; এগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে গ্রহণ করবেন না। যথা: নামাযকে জাকাতের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তাই কেউ যদি শুধু নামায আদায় করে কিন্তু জাকাত প্রদান না করে, তবে তার নামায আল্লাহ গ্রহণ করবেন না।
আল্লাহর নিজের প্রতি শুকর জ্ঞাপনকে পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাপোষণের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। কাজেই যদি কেউ শুধু আল্লাহর শুকর প্রকাশ করে কিন্তু পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাপোষণ না করে তাহলে আল্লাহ তার শুকরকে গ্রহণ করবেন না।
কোরআনে তাকওয়া অবলম্বনের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণের আদেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই যদি কেউ শুধু তাকওয়া অবলম্বন করে কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণ না করে তাহলে আল্লাহ সে তাকওয়াকে গ্রহণ করবেন না।
(দ্র: আইয়ানুর আখবারুর রেজা, ১ম খন্ড, পৃ. ২৫৮
আগস্ট 17 2023
ইমাম রেজার (আ.) কতিপয় জ্ঞানগর্ভ বাণী
ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) থেকে অনেক জ্ঞানগর্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস বর্ণিত। যেগুলো সূর্যের কিরণের ন্যায় মানুষকে সত্য ও আলোর পথ দেখায়। এখানে আমরা এ সব হাদীসে কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি; যাতে সেগুলো পাঠ এবং নিজেদের বাস্তব জীবনে মেনে চলার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।
১- সে-ই প্রকৃত মু’মিন যে তিনটি বৈশিষ্ট্য যথাযথভাবে মেনে চলবে; যথা: আল্লাহর সুন্নত, রাসূলের (সা.) সুন্নত এবং ইমামগণের সুন্নত। আল্লাহর সুন্নত হল স্বীয় রহস্য গোপন রাখা; রাসূলের (সা.) সুন্নত হল মানুষের সাথে স্নেহপরায়ণ ও উত্তম আচরণ করা এবং ইমামগণের সুন্নত হল বিপদাপদে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতা অবলম্বন করা।
(দ্র: উসুলে কাফী, খন্ড ৩য়, পৃ.৩৩৯)
২- প্রত্যেক মানুষের জ্ঞান হল তার প্রকৃত বন্ধু এবং অজ্ঞতা হল শত্রু।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ. ৪৬৭)
৩- ইসলামের চেয়ে ঈমান এক স্তর উপরে এবং তাকওয়া ঈমানের চেয়ে এক স্তর উপরে। আর মানব জাতীকে বিশ্বাসের চেয়ে উচ্চতম কিছুই দান করা হয় নি।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৪- ইমাম রেজার (আ.) নিকট তাওয়াক্কুলের সংজ্ঞা জিজ্ঞাসা করা হয়; জবাবে তিনি বলেন: তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় না করা।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৫- ঈমানের চারটি স্তম্ভ রয়েছে; যথা: তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা রাখা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে মেনে চলা এবং যাবতীয় বিষয়াবলীকে আল্লাহর প্রতি সমার্পণ করা।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৬- ইমাম রেজার (আ.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সর্বোত্তম বান্দা কারা; জবাবে তিনি বলেন: যারা নেক কাজে আত্মতুষ্টি লাভ করে, অন্যায় করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে, যাদেরকে কিছু প্রদান করলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্রোধের সময় আত্মসংবরণ করে।
(দ্র: তোহফুল উকুল, পৃ.৪৬৯)
৭- যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের কষ্ট লাঘব করবে; আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার কষ্ট লাঘব করবেন।
(দ্র: উসুলে কাফী, ৩য় খন্ড, পৃ.২৬৮)
৮- কোরআন আল্লাহর রজ্জু এবং বেহেশত গমণের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। কোরআন মানুষকে দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ দেয়। কোরআন কখনও পুরাতন হবে না; কারণ এটি নির্দিষ্ট কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ আসমানী কিতাব মানুষকে খোদামূখী ও দিকনির্দেশনা দান করে। কোরআন সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং এতে কোন ভ্রান্ত বিষয় এটিকে স্পর্শ করতে পারবে না।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৯২তম খন্ড, পৃ.১৪)
৯- যদি বেহেশত ও দোজখের অস্তিত্ব নাও থাকত, তবুও আল্লাহর অভূরন্ত নেয়ামতের কারণে তার প্রতি অনুগত ও বাধ্য থাকা মানুষের দায়িত্ব।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৭১তম খন্ড, পৃ. ১৭৪)
১০- হিংসা ও লোভ থেকে বিরত থাকবে, এ দু’টি বিষয় অতীত জাতিসমূহের ধ্বংস ডেকে এনেছে। কৃপণতা কর না; কেননা কোন ঈমানদার ব্যক্তি কৃপণ হতে পারে না।
(দ্র: বিহারুল আনওয়ার, ৭৮তম খন্ড, পৃ. ৩৪৬)
১১- আল্লাহ তিনটি বিষয়কে অপর তিনটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করেছে; এগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে গ্রহণ করবেন না। যথা: নামাযকে জাকাতের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তাই কেউ যদি শুধু নামায আদায় করে কিন্তু জাকাত প্রদান না করে, তবে তার নামায আল্লাহ গ্রহণ করবেন না।
আল্লাহর নিজের প্রতি শুকর জ্ঞাপনকে পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাপোষণের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। কাজেই যদি কেউ শুধু আল্লাহর শুকর প্রকাশ করে কিন্তু পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাপোষণ না করে তাহলে আল্লাহ তার শুকরকে গ্রহণ করবেন না।
কোরআনে তাকওয়া অবলম্বনের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণের আদেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই যদি কেউ শুধু তাকওয়া অবলম্বন করে কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণ না করে তাহলে আল্লাহ সে তাকওয়াকে গ্রহণ করবেন না।
(দ্র: আইয়ানুর আখবারুর রেজা, ১ম খন্ড, পৃ. ২৫৮
By bn • অন্যান্য, প্রকাশনা কেন্দ্র, মুস্তাবসেরগণের তাবলীগ, মুস্তাবসেরগণের প্রবন্ধ এবং মতামত, মুস্তাবাসেরিন পত্রিকা 0