মুনাফিকের চরিত্রের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

মুনাফিকের চরিত্রের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

মুনাফিকের চরিত্রের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

ইংরেজি হিপোক্রেট শব্দটির সহজ সরল অর্থ হলো মুনাফিক। মুনাফিক আরবি শব্দ। মুনাফিকরা দ্বিমুখী অর্থাৎ এরা দ্বিমুখী নীতিওয়ালা মানুষ। এরা মানুষের কাছে দুই রকম কথা বলে বেড়ায়।

পবিত্র কোরআনে এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, মুনাফিক হচ্ছে তারা যখন ইমানদারদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি, আবার যখন শয়তানের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা ইমানদারদের সঙ্গে শুধু ঠাট্টা করি মাত্র। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪)।

রসুল (সা.)-এর যুগে মুনাফিকদের দেখে বোঝা যেত না। তাদের সব আচার-আচরণ ছিল মুসলমানদের মতো। তারা মসজিদে যেত, নামাজ পড়ত এবং সব মুমিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি স্বভাব বিদ্যমান থাকবে সে মুনাফিক। সাহাবিরা জানতে চাইলেন তা কী? তিনি বললেন, যে মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, চুক্তি করলে তা লঙ্ঘন করে, আর যখন ঝগড়া করে তখন অশ্লীল কথা বলে। (বুখারি শরিফ, ২৪৫৯)।

মুনাফিকরা মুখে ইসলামের পক্ষে কথা বললেও কখনো তারা সত্যিকার অর্থে ইসলামকে ভালোবাসত না। তাদের অন্তর ছিল ইসলামবিদ্বেষ। আর তারা ছিল সব সময় মিথ্যাবাদী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, মুনাফিকরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে হে মুহাম্মদ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি অবশ্যই আল্লাহর রসুল। হ্যাঁ আল্লাহতায়ালাও জানেন তুমি নিঃসন্দেহে তাঁর রসুল। কিন্তু আল্লাহতায়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ০১)।

 

মুনাফিকের চরিত্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো সে মিথ্যাবাদী। সুতরাং মিথ্যার হাত থেকে আমাদের সবাইকে বাঁচতে হবে। আমরা যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করি এবং মিথ্যা বলার বদঅভ্যাস আছে তাদের এটি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে মিথ্যাই হলো সব পাপের মূল। রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য মিথ্যাবাদী হওয়া এতটুকুই যথেষ্ট, সে যা শুনে তা সবার কাছে প্রচার করে বেড়ায় (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৫)।

মুনাফিকের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, অঙ্গীকার রক্ষা না করা বা ওয়াদা ভঙ্গ করা। আমাদের সমাজে এ ধরনের লোকের অভাব নেই। বড় নেতা থেকে শুরু করে সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তর পর্যন্ত তা বিদ্যমান। আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের মধ্যে কেউ যখন কাউকে কোনো টাকা-পয়সা ধার দিই বা কোনো লেনদেন করি। আমরা পাওনাদারদের পাওয়া অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করতে গড়িমসি করি। তাকে হেনস্তা করি। এগুলো মুনাফেকির লক্ষণ। একজন মুমিন মুসলমান কখনো এ ধরনের কাজ করতে পারে না।

তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, আমানতের খেয়ানত করা। আমি আপনি প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজের সম্মুখীন হই। কারও কাছে কোনো সম্পদ, অর্থ বা সোনা-রুপা অর্থাৎ কোনো মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখলে আমানতকারী তা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করে কিংবা তা দেয় না। যাকে বলা হয় আমানতের খেয়ানত। এই বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে বিদ্যমান সে মুনাফিক। সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন, অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তাঁর হকদারদের কাছে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (আয়াত ৫৮)।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফিক অশ্লীল বা অশালীন কথা বলে। কখনো একজন মুমিন মুসলমান কোনো অবস্থাতেই অশালীন ভাষা ব্যবহার করবে না। মুমিনের কথাবার্তা আচরণ হবে শালীন। ভদ্রচিত। আর মুনাফিক ব্যক্তি কখনো মতের অমিল হলে অশালীন ভাষায় কথা বলে। সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটায়। যা কখনো কাম্য নয়।

আল্লাহ বলেন, যারা চায় দুনিয়ার বুকে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি ভোগ করবে। (সুরা নূর, আয়াত ২৯)।

মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইসহ অন্যরা ছিল মদিনার নেতৃত্বস্থানীয় লোক। এদের চালচলন আর কথাবার্তায় ছিল আভিজাত্যের ছাপ। এরা যখন মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলতে আসত তখন এদের পোশাক ছিল চাকচিক্যময়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তুমি যখন এদের প্রতি তাকিয়ে দেখ, তখন তাদের দেহাবয়ব তোমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়।

আর এরা যখন কথা বলে তখন তাদের কথা তোমার শুনতেই ইচ্ছা করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা দেয়ালের গায়ে খাড়া করে রাখা কাঠের গুঁড়ির মতো। (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ০৪)।

মুনাফিকরা সব সময় মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বারণ এবং অশ্লীল ও মন্দ কাজে উৎসাহিত করে।

আল্লাহ বলেন, মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরের দোসর। এরা খারাপ কাজের আদেশ দেয় আর ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করে এবং কল্যাণ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন। (সুরা তওবা, আয়াত ৬৭)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মুনাফেকির হাত থেকে রক্ষা করুন। মুমিন মুসলমানের চরিত্র ও গুণাবলি নিয়ে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার