মহানবীর (সা) আহলুল বাইত কুরআনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ/পশ্চিমে জাল আধ্যাত্মিকতার উত্থান

মহানবীর (সা) আহলুল বাইত কুরআনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ/পশ্চিমে জাল আধ্যাত্মিকতার উত্থান
মহানবীর (সা) আহলুল বাইত কুরআনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ/পশ্চিমে জাল আধ্যাত্মিকতার উত্থান

আহলে বাইত বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা রামাজানি বলেছেন, পবিত্র কুরআন হচ্ছে এমন এক পাঠ্য মহাগ্রন্থ যা বাস্তবেই আধুনিক মানুষকে আদর্শিক ও নৈতিক সংকট এবং প্রথা বা দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত নানা সংকট হতে মুক্ত করতে সক্ষম। আর মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইত (আ) হচ্ছেন পবিত্র কুরআনের বর্ণিত সর্বোত্তম ও প্রকৃত আদর্শের দৃষ্টান্ত।

তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলায় আহলে বাইত বিশ্ব সংস্থার নতুন বই ও প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনাব রেজা রামাজানি ওই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রসহ মৌলিক বিজ্ঞানের নানা দিকে যখনই জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে তখনই সমাজের উন্নতি ঘটবে। একটি সমাজের উন্নতির অর্থ সেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির নৈতিক ও ইবাদত-বন্দেগিসহ প্রথাগত ব্যবহারিক নানা কর্মতৎপরতার উন্নতি। আর এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা ও জ্ঞান বা শিক্ষার মাত্রা যত বাড়বে সেই সমাজ হবে ততই উন্নত।

আহলে বাইত বিশ্ব সংস্থার প্রধান বলেছেন, আল্লামা হাসানজাদে অমোলি বলেছেন মহান আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান বা শিক্ষা ও সম্পদ-সমৃদ্ধতার জন সৃষ্টি করেছেন।

জনাব রামাজানি আরও জানিয়েছেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের শুরুর দিকে বৈজ্ঞানিক তৎপরতায় বিশ্বে ইরানের অবস্থান ছিল ৫৭, বর্তমানে তা ১৫ তে উন্নীত হয়েছে এবং কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে ইরানের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে। আহলে বাইত বিশ্ব সংস্থা এক বছরে ১৭৫টি অনুবাদ প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং গত ফার্সি বছর ১৪০২-এ এই সংস্থার উইকি শিয়া প্রকল্পে ২২ টি ভাষায় ৮ হাজারেরও বেশি প্রবন্ধ রয়েছে। আহলে বাইত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয় বা সাবজেক্ট সংখ্যা ৮টি থেকে বেড়ে ২৩-এ দাঁড়িয়েছে।

জনাব রামাজানি আরও বলেছেন, এ সংস্থার প্রকাশনা ও তথ্য বা জ্ঞান-গবেষণাগত উপকরণগুলো এত ব্যাপক যে কেউ যদি মহানবীর (সা) আহলে বাইত (আ) সম্পর্কে গবেষণা করতে বা জানতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই আহলে বাইত বিশ্ব সংস্থার গবেষণা-কর্মগুলো পড়তে হবে, আর এসবের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসগত, চিন্তাগত বা আদর্শিক, নৈতিক, আইনি ও ব্যবহারিক বিষয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, ‘এই সংস্থার কাজই হল শিক্ষিত শ্রেণীসহ সমাজের প্রত্যেকের কাছে আহলে বাইতের (আ) পরিচয় তুলে ধরা যারা হলেন সর্বোত্তম মানবীয় আদর্শ। মানব-সমাজ এই মহামানবদের চিনতে পারেনি বলেই অন্যদের অনুসরণ করছে। আহলে বাইত (আ) হলেন সর্বোত্তম আদর্শ ও পবিত্র কুরআনের বক্তব্যগুলোর প্রকৃত লক্ষ্য তাঁরাই।’

জনাব রামাজানি ইরানের বিশেষজ্ঞ পরিষদেরও একজন সদস্য। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কুরআনের সঙ্গে এখনও আমাদের গভীর সম্পর্ক ও অনুরাগের বন্ধন গড়ে উঠেনি। কুরআনের বিষয়বস্তু, বাস্তবতা, নির্দেশনা ও সূক্ষ্ম অর্থের দিকগুলোর সঙ্গে আমরা এখনও অপরিচিত। কুরআন এখনও নিঃসঙ্গ ও পরিত্যক্ত। অথচ পবিত্র কুরআন হচ্ছে এমন এক পাঠ্য মহাগ্রন্থ যা বাস্তবেই আধুনিক মানুষকে আদর্শিক ও নৈতিক সংকট এবং প্রথা বা দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত নানা সংকট হতে মুক্ত করতে সক্ষম। যে কেউ কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে সে কখনও একাকিত্ব অনুভব করবে না। কুরআনই আধুনিক মানব সমাজকে মুক্তি দেয়ার একমাত্র প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র। আমরা যদি ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা ও অর্থ তুলে ধরতে পারি তাহলে সবাই ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়বে গভীর অনুরাগ নিয়ে।’

তিনি আরও বলেছেন, এক সময় আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সংগ্রাম করা হত। কিন্তু এখন সেই পাশ্চাত্যই আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তবে তারা ঝুঁকেছে নকল ও মেকি আধ্যাত্মিকতার দিকে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তিন থেকে চার হাজার কৃত্রিম ও জাল আধ্যাত্মিক ধারার অস্তিত্ব রয়েছে। কার্লোস কাস্তান্দা, ডন জুয়ান ও মেক্সিকোর আধ্যাত্মিকতা এবং আন্তঃ-বৈশ্বিক রহস্যবাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ থেকে বোঝা যায় যে বিশ্ব ধর্মীয় আধ্যাত্মিক দারিদ্র ও ধর্মীয় সংস্কৃতির দারিদ্রের শিকার। #