হার না-মানা জাতি মুসলমান

হার না-মানা জাতি মুসলমান
হার না-মানা জাতি মুসলমান

পবিত্র ভূমি গোটা ফিলিস্তিন এখন অগ্নিগর্ভ। ফিলিস্তিনিদের আপন মাতৃভূমি থেকে তাড়িয়ে জোর করে দেশ দখল করার জন্য এমন কোনো অপরাধ নেই, যা ইসরায়েল করেনি। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র, গণবিধ্বংসী হাইড্রোজেন, ধর্ষণ, বোমার উপর্যুপরি আঘাতে পবিত্র জনপদ বিধ্বস্ত ও নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের কারারুদ্ধ করা যেন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের ঘটনা। তাদের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে প্রতিটি মুমিনের হৃদয়।

কিন্তু একজন মুমিনের কর্তব্য হলো হতাশ না হয়ে এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করা। মসজিদুল আকসা ও ইসলামের মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা। প্রকৃত মুমিন কখনো হার মানে না, বরং দিনরাত কাজ করে যায় আল্লাহর সাহায্যকে ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ জমিনের ওপর এমন কোনো মাটির অথবা পশমের ঘর (তাঁবু) বাকি থাকবে না, যে ঘরে আল্লাহ ইসলামের বাণী পৌঁছে দেবেন না।
সম্মানিতের ঘরে সম্মানের সঙ্গে আর লাঞ্ছিতের ঘরে লাঞ্ছনার সঙ্গে তা পৌঁছাবেন। আল্লাহ তাআলা যাদের সম্মানিত করবেন তাদের স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুলের উপযুক্ত করে মর্যাদাবান ও গৌরবময় করে দেবেন। পক্ষান্তরে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাদের আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন এবং তারা এই কালিমার প্রতি অনুগত হওয়ার জন্য বাধ্য হবে।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৩০২)
তবে মুমিনদের এই পর্যায়ে পৌঁছতে কয়েকটি করণীয় আছে।
এ প্রসঙ্গে ড. ইউসুফ কারজাভি (রহ.) বলেন, আল্লাহর সাহায্য আপনা আপনি আসে না, কোনো কারণ ছাড়া অবতীর্ণ হয় না এবং মানুষের দুয়ারে অন্ধের মতো করাঘাতও করে না। আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার কিছু নিয়ম-নীতি আছে, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর বান্দারা তা জেনে যথাযথভাবে আমল করতে পারে। যেমন :
১. আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান, ধৈর্য ও তাঁর নুসরাতের প্রতি অবিচল আস্থা রাখা। কারণ এই বিশ্বাস রাখা, আল্লাহ যাকে সাহায্য করেন তাকে দুনিয়ার সব অপশক্তি মিলেও পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনি যাকে অপদস্থ করেন সে বিপুলসংখ্যক জনবল ও অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেও বিজয়ী হতে পারবে না।
এই মর্মে কোরআনের সুস্পষ্ট কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‌‌‘যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের ওপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬০)
এই বিশ্বাসের কারণেই আল্লাহ তাআলা সংখ্যাধিক্যের ওপরও অল্পসংখ্যক মুমিনকে বিজয় দান করেছেন। যেমন : তালুত বাহিনীকে জালুতের বিরুদ্ধে সাহায্য দান করেছেন এবং নবীকে গুহায় থাকা অবস্থায় কাফিরদের থেকে রক্ষা করেছিলেন।
২. আল্লাহর দ্বিনকে সমুন্নত করে তাঁর সাহায্য লাভ করা। এটি এমন একটি শর্ত, যা আয়াতে আরবি ব্যাকরণের নীতি শর্তের শব্দযোগে এসেছে (অর্থাৎ বাক্যের প্রথমাংশ বাস্তবায়িত হলে দ্বিতীয়টি অবশ্যই হবে)। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।’ (সুরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ৭)
৩. পারস্পরিক সহযোগিতা করা। কারণ আল্লাহর সাহায্য শুধু মুমিনদের জন্যই নির্ধারিত। তাই আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে একে অপরের সহযোগিতা একান্ত জরুরি। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তিনিই তোমাকে শক্তি জুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে। আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে।’
(সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬২-৬৩)
৪. দোয়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের নিজ কুদরতে সাহায্য করেন। কখনো ফেরেশতা অবতরণের মাধ্যমে। যেমনটি বদর, খন্দক ও হুনায়নের যুদ্ধে দেখা গেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদের তোমাদের পরওয়ারদেগার যে আমি সঙ্গে আছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্ত ধীরস্থির করে রাখো।’
(সুরা : আনফাল, আয়াত : ১২)
মহান আল্লাহ নির্যাতিত সব মুসলিম অঞ্চলকে তাঁর কুদরত দ্বারা হেফাজত করুন।