মহানবী (সা.)-এর নামে কোরআনের সুরা

মহানবী (সা.)-এর নামে কোরআনের সুরা
মহানবী (সা.)-এর নামে কোরআনের সুরা

সুরা মুহাম্মদ। মহানবী (সা.)-এর নামে অবতীর্ণ পবিত্র কোরআনের একটি সুরা। সুরাটি মদিনায় হিজরত করার পর অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুরায় যুদ্ধসংক্রান্ত আলোচনা বেশি থাকায় এর অপর নাম কিতাল।

সুরা মুহাম্মদ মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহু নির্দেশনা ও শিক্ষা রয়েছে। যার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. ঈমান ও তার আহ্বান : সুরা মুহাম্মদের সূচনা হয়েছে ঈমানের আহ্বান ও কুফরির ক্ষতি বর্ণনার মাধ্যমে। আর একজন মানুষের জন্য ঈমান রক্ষা করা এবং কুফরি থেকে আত্মরক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করে এবং অপরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দেন। যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আর এটাই তাদের প্রতিপালক থেকে প্রেরিত সত্য, তিনি তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দেন এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দেন।’ (আয়াত : ১-২)
২. সত্যের অনুসরণ : ঈমানের পর মুমিনের দায়িত্ব সত্য দ্বিনের অনুসরণ করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা এ জন্য যে যারা কুফরি করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে এবং যারা ঈমান আনে তারা তাদের প্রতিপালক প্রেরিত সত্যের অনুসরণ করে।

’ (আয়াত : ৩)
৩. আল্লাহর সাহায্য চাওয়া : ব্যক্তি যখন দ্বিনের ওপর চলতে চায় এবং দ্বিন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন তার আল্লাহর সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এ জন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (আয়াত : ৭)

৪. কিয়ামত বেশি দূরে নয় : কিয়ামতের দিন বান্দার যাবতীয় আমলের হিসাব হবে। সেদিন তারা ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান পাবে। আর কিয়ামত মানুষের নিকটবর্তী।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি শুধু এ জন্য অপেক্ষা করছে যে হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে পড়ুক? কিয়ামতের আলামত তো এসে পড়েছে। কিয়ামত চলে এলে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কিভাবে!’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৮)
৫. ক্ষমতার মোহে আত্মীয়তা ভুলে যাওয়া উচিত নয় : পার্থিব জীবনের উন্নতি ও ক্ষমতা লাভের কারণে আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত নয়। এমন লোকের নিন্দায় বলা হয়েছে, ‘তাহলে ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে! আল্লাহ এদের লানত করেন আর করেন বধির ও দৃষ্টিহীন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ২২-২৩)

৬. কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা আবশ্যক : পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ মানবজীবনের যাবতীয় সংকট সমাধানের মাধ্যম বানিয়েছেন। তবে এ জন্য কোরআন নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর মনোযোগসহ চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (আয়াত : ২৪)

৭. মুরতাদরা মিথ্যা আশায় ভোগে : মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে মুরতাদ বলা হয়। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎপথ স্পষ্ট হওয়ার পরও যারা মুরতাদ হয়, শয়তান তাদের কাজ (নিজেদের কাছে) সুন্দর করে দেখায় এবং তাদের মিথ্যা আশা দেয়।’ (আয়াত : ২৫)

৮. মৃত্যুর সময় থেকে পাপীরা শাস্তি পায় : যারা পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্য, মৃত্যুর সময় থেকেই তাদের শাস্তি শুরু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণহরণ করবে, তখন তাদের দশা কেমন হবে?’ (আয়াত : ২৭)

৯. বিদ্বেষ লুকানো যায় না : অন্তরের বিদ্বেষ এমন, যা লুকিয়ে রাখা যায় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা কি মনে করে যে আল্লাহ কখনো তাদের মনের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?’ (আয়াত : ২৯)

১০. অবিশ্বাস নিয়ে যেন মৃত্যু না হয় : অবিশ্বাস নিয়ে মারা গেলে পরকালে শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ থাকে না। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাদের কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।’ (আয়াত : ৩৪)

আল্লাহ সবাইকে সুমতি দান করুন।