চেহলাম; ইসলামী বিশ্বের জন্য বিরাট সম্মান, ঐক্য ও আন্দোলনের বার্তাবাহী

চেহলাম; ইসলামী বিশ্বের জন্য বিরাট সম্মান, ঐক্য ও আন্দোলনের বার্তাবাহী
চেহলাম; ইসলামী বিশ্বের জন্য বিরাট সম্মান, ঐক্য ও আন্দোলনের বার্তাবাহী

লোরেস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আলি নাজারি বলেছেন আরবায়িনে হোসেইনি বা চেহলাম হচ্ছে ইসলামী উম্মাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক প্রকাশ।

ইসনা নিউজ এজেন্সির সাথে আলাপকালে ডঃ নাজারি এই মহান আধ্যাত্মিক ও মানবিক বৈশিষ্ট্যের কিছু দিক ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা এই সেগুলো খানিকটা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করবো:

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর প্রেমিকদের কারবালা ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে নাজারি বলেন:

আরবাইন হল এমন একটি সফর যা হৃদয়ের ভিত্তিমূল থেকে শুরু হয়, যিয়ারতকারীরা তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আবা আবদুল্লাহ (আ.)-এর প্রতি গভীর ভালবাসার সাথে ফেলে।

তিনি গুরুত্বের সাথে বলেন এই জাকজমকপূর্ণ মিছিল মুসলিম বিশ্বের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনে। তিনি আরও বলেন:

এই আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি, শত্রুদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তারা এই উপস্থিতিকে ম্লানভাবে দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে কারবালার পথে ধাবমান বিপুল সংখ্যক যাত্রী।

তিনি আরও বলেন:

আরবাইন মিছিলে ফিলিস্তিন ও গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি সমর্থন আগের চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। যিয়ারতকারীরা প্রতিরোধ ফ্রন্টের শহীদদের ছবি এবং ফিলিস্তিনের পতাকা তাদের হাতে নিয়ে বিশ্বের নিপীড়িতদের সমর্থনে বার্তা দিয়ে যায়।

লোরেস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আরও বলেন:

আরবাইনে হোসাইনি আন্দোলন মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর চেহলাম বার্ষিকীতে কারবালায় সমবেত হয় এবং এটা প্রমাণ করে যে ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু হল সাইয়্যেদুশ শোহাদা (আ.)।

ইসলামের শত্রুদের মোকাবিলায় এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন:

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বিশুদ্ধ রক্তে এমন উষ্ণতা রয়েছে যে তা বাতাসের উত্তাপসহ এ সফরের কষ্টগুলোকে সহজ করে দেয়। এই সফর শুধু ইমাম মাহদি (আ.)-এর পদাঙ্ক অনুসারী সৈন্যদের জন্য একটি মহড়া নয়, বরং এটি শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধ হিসেবেও বিবেচিত।

নাজারি বলেন, এই অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক যে ঐক্য গঠিত হয় সেই ঐক্যের সুন্দর দৃশ্য কারবালার ৮০ কিলোমিটার সড়কব্যাপী লক্ষ্য করা যায়।

তিনি বলেন:

এই পদযাত্রায় ইরাকি শিয়া জনগণ স্বাগতিক দেশ হিসেবে তাদের আতিথেয়তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তারা যিয়ারতকারীদেরকে তাদের সমস্ত সামর্থ দিয়ে বরণ করে।

পরিশেষে তিনি বলেন: হোসেইনি আরবায়িনের পদযাত্রা শত্রুদের বিক্ষুব্ধ করেছে। আল্লাহ বলেছেন যে মুসলমানদের উচিত এমন একটি পথে চলা যা শত্রুকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। আর আরবায়িন শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

আরবায়িন:

আরবায়িন (আরবি: আল-আরবায়িন) এর আক্ষরিক অর্থ হল চল্লিশতম। ইসলামী পরিভাষায় এটি একটি ইসলামি মাজহাবি অনুষ্ঠান যা সফর মাসের ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। আশুরার দিন মানে ইসলামের নবীর নাতি, আলী বিন আবি তালিব ও ফাতিমা জাহরার পুত্র এবং আহলে বাইতের তৃতীয় ইমাম হুসাইন বিন আলী কারবালায় শাহাদাত বরণ করার চল্লিশ দিন পর আরবায়িন অনুষ্ঠিত হয়।

এই দিনে নবী পরিবারের ভক্তরা কারবালায় ইমাম হোসেনের মাজার জিয়ারত করতে যান।

ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ানের সেনাবাহিনীর হাতে ৬১ হিজরিতে কারবালার যুদ্ধে ইমাম হোসাইন ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শহীদ হন। এখন আহলে বাইত ভক্তদের একটি বিশাল জনতা আরবায়িনের কাছাকাছি দিনগুলোতে কারবালার দিকে পায়ে হেঁটে যায়। বিশ্বের পায়ে হাঁটার বৃহত্তম অনুষ্ঠানগুলোর একটি এই আরবায়িন মিছিল। কোনো কোনো বছর ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ২ কোটির বেশি হয় বলে অনুমান করা হয়।