পবিত্র কাবাঘর ও ইবরাহিম (আ.)

পবিত্র কাবাঘর ও ইবরাহিম (আ.)
পবিত্র কাবাঘর ও ইবরাহিম (আ.)

হজ ইসলামের পঞ্চভিত্তির অন্যতম ফরজ ইবাদত। শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য সমন্বিত ইবাদত। হজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতি। পশ্চিম ইরাকের বসরার নিকটবর্তী বাবেল শহরে জন্মগ্রহণ করেন ইবরাহিম (আ.)।

তিনি ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। ইবরাহিম (আ.) পবিত্র হজের প্রচলন করেন। তাঁকে আবুল আম্বিয়া (নবীদের পিতা) বলা হয়। তিনিই মুসলিম মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা।

পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম ২৫টি সুরায় ৬৯ বার উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে ৩০টি ঘটনায় পরীক্ষা করেছিলেন। সুরা তাওবায় ১০টি, আহজাবে ১০টি ও মুমিনুনে ১০টি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।

ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল…।


(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৭)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন আমি কাবাঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো। এবং ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৫)

হজ ও ইবরাহিম নামে পবিত্র কোরআনে দুটি সুরা আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমকে ওই ঘরের (বায়তুল্লাহ) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না এবং আমার ঘরকে পাক-পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, রুকু-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর জন্য। আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূরপথ পাড়ি দিয়ে।

…তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৬-২৯)
ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর কাছে নিজের জন্য, মুসলিম জাতির সুখ লাভ, দুঃখ লাঘবে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা ও সন্তান-সন্ততি ইত্যাদির জন্য অসংখ্যবার দোয়া করেছিলেন। যেমন—

 

বংশধারা সম্প্রসারণ ও আনুগত্য

(রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না, ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম, রব্বানা ওয়াজআলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়া মিন জুররিয়্যাতিনা উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাক,…ওয়াল হিকমাতা ওয়াইউজাক্কিহিম, ইন্নাকা আনতাল আজিজুল হাকিম)।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদের এই আমলটুকু কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। ওহে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকে একটি অনুগত জাতি সৃষ্টি করো। আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু। হে আমাদের রব, এই ঘরের পড়শিদের মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠাও, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতগুলো পাঠ করবেন। তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৭, ১২৯)

 

রিজিক ও আবাসন

(রাব্বিজ আল হাজাল বালাদান আমিনাও ওয়ারযুক্ব আহলাহু মিনাছ ছামারাতি মান আমানা মিনহুম বিল্লাহি ওয়াল ইয়্যাওমিল আখির,…)

অর্থ : হে আমার রব! এই শহরকে নিরাপদ শহর করো, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো…। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৬)

 

একত্ববাদে অবিচল থাকা

(রাব্বিজ আল হাজাল বালাদা আমিনাও ওয়াজনুবনি ওয়া বানিয়্যা আন না’বুদাল আসনাম।…ওয়া মা ইয়্যাখফা আলাল্লাহি মিন শাইয়িন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামায়ি)

অর্থ : হে আমার রব! এই নগরীকে নিরাপদ করো এবং আমাকে ও আমার পুত্রদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখো। হে আমার রব! এসব প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সেই আমার দলভুক্ত,…হে আমাদের রব! আমরা যা গোপনে করি এবং যা প্রকাশ্যে করি তা নিশ্চয়ই তুমি জানো। আর ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না।

(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৫-৩৮)

 

নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী, বংশধরদের কল্যাণ (রাব্বিজ আলনি মুক্বিমাস সলাতি ওয়া মিন জুররিইয়্যাতি, রব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দুয়া…ইয়্যাওমা ইয়্যাক্বুমুল হিসাব)

অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ও আমার বংশধরদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। হে আমাদের রব! আমার দোয়া কবুল করো। হে আমার রব! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার মা-বাবাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কোরো।

(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০-৪১)

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ