একতাবদ্ধ থাকার উপকারিতা

একতাবদ্ধ থাকার উপকারিতা
একতাবদ্ধ থাকার উপকারিতা

ইসলামের বিধান হলো কোনো স্থানে যদি তিনজন মুমিনও থাকেন, তবে সেখানে একজনকে আমির করে জামাত বা সংগঠন কায়েম করা অপরিহার্য। এ জামাত যত বড় হবে তত ভালো। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি।

 

(১) জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করা, (২) আমিরের নির্দেশ শ্রবণ করা, (৩) তাঁর আনুগত্য করা, (৪) প্রয়োজনে হিজরত করা ও (৫) আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা। যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল তার গর্দান থেকে ইসলামের গণ্ডি ছিন্ন হলো, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি মানুষকে জাহেলিয়াতের দাওয়াত দ্বারা আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামিদের দলভুক্ত হবে। যদিও সে সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম।

 

’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৬৩)

নিম্নে সংঘবদ্ধ জীবনের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

 

 

 

আল্লাহর রহমত লাভ

 

সংঘবদ্ধ জীবনে আল্লাহর রহমত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জামাতের ওপর আল্লাহর হাত আছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)

 

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘জামাতবদ্ধ থাকা রহমত এবং বিচ্ছিন্নতা আজাব।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৩১০৯)

 

 

 

শক্তি বৃদ্ধি করা

 

পার্থিব জীবনে সংগঠন একটি বিশাল শক্তি।

 

ঐক্যবদ্ধ জনবল না থাকলে অস্ত্রশক্তিও কোনো কাজে আসে না। এ জন্য আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, ‘কাফিরদের মোকাবেলার জন্য তোমরা সাধ্যমতো শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখো, যা দিয়ে তোমরা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের ভীত করবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬০)

ফলে সংগঠনের কারণে আল্লাহবিরোধীরা সমীহ করে। জামাতবদ্ধ জীবনের আরেকটি উপকার হলো এর মাধ্যমে সমাজে অনেক যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়।

 

 

 

সুসম্পর্ক বৃদ্ধি

 

সংগঠনভুক্ত কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

 

যেমন আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। আর যারা তার সাথি, তারা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের মধ্যে দয়াপরবশ।’

(সুরা : ফাতহ, আয়াত : ২৯)

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্য প্রাসাদস্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙুলগুলো একটার মধ্যে আরেকটা প্রবেশ করালেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৮১)

 

শয়তানের কবল থেকে রক্ষা

 

শয়তান মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়। কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ হলে শক্তিতে পরিণত হবে। এটা সে চায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে আরব উপদ্বীপে মুসল্লিরা তার ইবাদত করবে। তবে সে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির ব্যাপারে নিরাশ হয়নি।’

 

(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৭৪)

 

আর একাকী থাকলে শয়তান সঙ্গী হয় এবং সংঘবদ্ধ থাকলে শয়তান দূরে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করো। বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থেকো। কেননা শয়তান একক ব্যক্তির (বিচ্ছিন্নজনের) সঙ্গে থাকে এবং সে দুজন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)

 

 

সামাজিক শৃঙ্খলা

 

সংগঠন সমাজজীবনে শৃঙ্খলা শেখায়। স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে। মানুষের জন্য ভাবতে শেখায়। আত্মকেন্দ্রিক না করে বহুকেন্দ্রিক করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির অন্তর তিনটি বিষয়ে খিয়ানত করে না—১. একমাত্র আল্লাহর জন্য আমলকে খালেস করা, ২. মুসলিমদের নেতৃবৃন্দকে সদুপদেশ দান, ৩. মুসলিমদের জামাতকে আঁকড়ে থাকা। কেননা তাদের দোয়া তাদের পেছনের সবাইকে বেষ্টন করে নেয়।’

 

(তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৮)