আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি জানেন কোন কোন বিধান মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর বা উপযোগী এবং কিসে রয়েছে তার অকল্যাণ ও অমঙ্গল। আর যেহেতু ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ ঐশী ধর্ম। তাই সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও জীবনের সব দিকের বিধানে সমৃদ্ধ এবং সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এ ধর্মের বিধানগুলোকে সব ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সমাজগুলো শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে যেত। একইসঙ্গে মানুষের হতো গুণগুলোরও সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটত এবং তাদের মর্যাদাও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হতো।
ঈমান, আমানতদারী, সত্যবাদিতা, ক্ষমাশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি এমন কিছু গুণ যা অর্জন করার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় ইসলাম। এভাবে ইসলামের উন্নত শিক্ষা সমাজকে উপহার দেয় উন্নত চরিত্রের মানুষ। এ ধরনের চরিত্র বা গুণ অমুসলমানদেরও অভিভূত করছে। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফরাসি নও-মুসলিম রজার বুনগুস এমনই একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব। তার মতে, ইসলাম উন্নত নৈতিক গুণাবলীর ধর্ম। অথচ পাশ্চাত্য এইসব গুণ ও নৈতিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
রজার বুনগুস ইন্টারনেটভিত্তিক একটি পত্রিকার সম্পাদক ও পরিচালক। ইউরোপের কৃষ্ণাঙ্গ ও আফ্রিকানদের বিষয়ে ফরাসি ভাষায় নানা তথ্য ও বক্তব্য প্রচার করা হয় তার এই পত্রিকায়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন:
“কিভাবে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছি তা আমি বলতে পারব না। তবে অবশ্যই বলতে হবে যে আমি নিজে নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি বরং মহান আল্লাহই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন। তিনিই আমাকে অনুগ্রহ করেছেন, আমাকে বেছে নিয়েছেন ও গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহই তাঁর পথ-নির্দেশনার মাধ্যমে আমাকে সঠিক পথে এনেছেন।”
রজার বুনগুস মনে করেন ইউরোপে ইসলামের দিকে আগ্রহ নজিরবিহীন পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেছেন:
“আমি নিজেই ইসলামের প্রতি নজিরবিহীন আকর্ষণের দৃষ্টান্ত। পাশ্চাত্যে সত্যিকার অর্থেই ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। পাশ্চাত্য যে ইসলাম-আতঙ্কে ভুগছে তা অকাট্য সত্য এবং ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। আর এ জন্যই মানুষ জানতে চাচ্ছে ইসলাম কেমন ধর্ম এবং এই ধর্মের বক্তব্যই বা কী যে এর বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য এতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ও এর বিরুদ্ধে এত ব্যাপক প্রচারণা চলছে?”
রজার বুনগুস আরো বলেছেন:
“ইসলামের বিরুদ্ধে এত প্রচারণা ও আতঙ্ক ছড়ানোর কারণেই ইউরোপের জনগণ ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও গবেষণা করতে আগ্রহী হচ্ছে। আর এ ধরনের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তাদের বেশিরভাগই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। আমার নিজের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটেছে এবং ইউরোপ-আমেরিকার অনেক নও-মুসলিম এভাবেই মুসলমান হয়েছেন। আমি যখন একজন সাংবাদিক হিসেবে ইসলামের বিরুদ্ধে এত ব্যাপক প্রচারণা চলতে দেখলাম তখনই এ ধর্ম সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ বেড়ে যায় এবং পড়াশুনা ও গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মানুষের মধ্যে উন্নত নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূল এসেছেন। আর উন্নত নৈতিক গুণ বিকাশের লক্ষ্য হল মানুষকে পূর্ণতা অর্জনের পথে এগিয়ে নেয়া। বিশ্বনবী (সা.) মূলত আল্লাহর সহায়তায় উন্নত নৈতিক গুণ দেখিয়েই মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। তাঁর সুমহান চরিত্রের মধ্যে এমনসব উচ্চতর মানবীয় গুণ ও চারিত্রিক সুষমা ছিল যে কঠোর শত্রুরাও এর মাধ্যমে প্রভাবিত হত। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষের সুমহান চরিত্র ও গুণগুলোকে পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্যই আমার আবির্ভাব ঘটেছে।
নও-মুসলিম রজার বুনগুসও ইসলামের অনন্য চারিত্রিক বা নৈতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ এবং অভিভূত। তিনি বলেছেন:
“পশ্চিমে নৈতিকতাহীনতা ব্যাপক প্রচলিত বিষয়। কিন্তু ইসলাম একে মেনে নেয় না। ইসলাম নৈতিকতার প্রচলন করছে। আর ইসলাম ধর্মই হল এই নৈতিকতা। পশ্চিমা জনগণ হাড়ে হাড়ে এর শূন্যতা অনুভব করছে। কিন্তু ইসলাম নৈতিক চরিত্রের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করায় তারা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা ইসলামের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও আত্মিক চাহিদার সমাধান পাচ্ছে। আমার মতে ইসলামের ব্যাপক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান কারণই ছিল মানুষের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.)’র অনুপম আচার-আচরণ, ব্যবহার ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় নৈতিক চরিত্র। ইসলাম কখনও বৈষম্য ও আধিপত্যকামিতা মেনে নেয় না। রাসূল (সা.) দাস বা গোলামদের মুক্তি দিতেন। অথচ আজ পাশ্চাত্যে নতুন ধরনের দাস-প্রথা চালু হয়েছে এবং এ প্রথাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।”
মার্কিন সরকার গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সমর্থক বলে দাবি করে আসলেও বাস্তবে এসবকে গুরুত্ব দেয় না, বরং এসব বিষয়কে স্বার্থ হাসিলের অজুহাত হিসেবেই ব্যবহার করে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলমানদের মানবাধিকার ব্যাপক মাত্রায় পদদলিত করা হচ্ছে। এটা খুবই স্পষ্ট। পশ্চিমা সরকারগুলো ইসলামের আলোকোজ্জ্বল চেহারাকে বিকৃতভাবে তুলে ধরছে। বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তারা ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষী ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফরাসি নও-মুসলিম রজার বুনগুস বলেছেন:
“পাশ্চাত্য হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির মত যার এক হাতে রয়েছে মদভরা পাত্র। এটা তাদের ব্যবসার আসল পণ্য। এর মাধ্যমে তারা আমোদ-ফুর্তি ও অনাচারে লিপ্ত হয়। আর এ জন্যই নৈতিকতার ধর্ম ইসলামকে তারা এত ভয় পায় ও এ ধর্মের বিরোধিতা করছে এবং এ ধর্মকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। কারণ, ইসলাম অনাচার ও ব্যভিচারের কঠোর বিরোধী। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মুসলমানদের বাস্তব অবস্থার ঠিক বিপরীত চিত্রই তুলে ধরছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো।”
নও-মুসলিম রজার বুনগুস আরো বলেছেন:
আমি বেশ সাহস নিয়ে বলতে পারি পাশ্চাত্যে ও ফ্রান্সে মুসলমানদের বেশির ভাগই প্রতিভাবান। এটা অনস্বীকার্য একটি বিষয় এবং এর ফলে পাশ্চাত্যে সামাজিক পাল্লা মুসলমানদের দিকেই ভারী হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো বিষয়টিকে উল্টো করে দেখাচ্ছে। তারা ইউরোপের মুসলমানদের বর্বর ও হিংস্র বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একইভাবে তারা ইরানের নারী সমাজের অবস্থানকেও খাটো করে দেখাতে চায়। এইসব মিডিয়া বলছে, ইরানের নারী কাজ করে না, চাকরিতে তাদের স্থান নেই এবং সমাজে তারা সক্রিয় নয়। তারা কেবলই রান্নাঘরের কর্মী। অথচ ইরানের নারীর অবস্থা কথিত এ অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইত (আ.) মানুষকে প্রকৃত সৌভাগ্য, শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার দিকে আহ্বান জানিয়ে গেছেন। অথচ পাশ্চাত্য ইসলামের ইতিহাসের এই অত্যুজ্জ্বল তারকাদের ব্যাপারেও বিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে নও-মুসলিম রুজে বুনগুস বলেছেন:
পাশ্চাত্য আহলে বাইত (আ.)’র ইসলাম বা প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অধিকারী নয়। সেখানে ইসলাম সম্পর্কে যা বলা হয় তা ওয়াহাবীদের পক্ষ থেকেই প্রচার করা হয়। আর এসব তথ্যই প্রতিফলিত হয় পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমে। আহলে বাইত (আ.)’র ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে খ্রিস্টানরাও। অবশ্য মূল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে ওয়াহাবীরা ও উগ্রপন্থী বিচ্যুতরা। ওয়াহাবীরা শিয়াদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারকেই তাদের টিকে থাকার মাধ্যম বলে মনে করে। অথচ বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইত (আ.) শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। এ ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনি আহলে বাইত (আ.)’র মর্যাদা এবং পরস্পরের পবিত্রতার বিষয়ে প্রকৃত শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কখনও বিতর্ক বা বিবাদ হতে দেখবেন না। এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ফতোয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। আমি এই ফতোয়া শুনে খুবই আনন্দিত হয়েছি। এই ফতোয়া ইসলামের প্রকৃত চেহারা ও বিশেষ করে শিয়া মুসলমানদের প্রকৃত চেহারা সুস্পষ্ট করেছে এবং এর ফলে উগ্রবাদীদের বা চরমপন্থীদের ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যাপক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ফরাসিরা ব্যাপক হারে ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে। সেখানে ইসলাম দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে ও ফ্রান্সে ইসলামের প্রতি আকর্ষণে কোনো ভাটা বা কমতি দেখা যায়নি।
মার্চ 2 2024
মহান আল্লাহই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন: রুজে বুনগুস
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি জানেন কোন কোন বিধান মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর বা উপযোগী এবং কিসে রয়েছে তার অকল্যাণ ও অমঙ্গল। আর যেহেতু ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ ঐশী ধর্ম। তাই সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও জীবনের সব দিকের বিধানে সমৃদ্ধ এবং সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এ ধর্মের বিধানগুলোকে সব ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সমাজগুলো শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে যেত। একইসঙ্গে মানুষের হতো গুণগুলোরও সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটত এবং তাদের মর্যাদাও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হতো।
ঈমান, আমানতদারী, সত্যবাদিতা, ক্ষমাশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি এমন কিছু গুণ যা অর্জন করার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় ইসলাম। এভাবে ইসলামের উন্নত শিক্ষা সমাজকে উপহার দেয় উন্নত চরিত্রের মানুষ। এ ধরনের চরিত্র বা গুণ অমুসলমানদেরও অভিভূত করছে। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফরাসি নও-মুসলিম রজার বুনগুস এমনই একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব। তার মতে, ইসলাম উন্নত নৈতিক গুণাবলীর ধর্ম। অথচ পাশ্চাত্য এইসব গুণ ও নৈতিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
রজার বুনগুস ইন্টারনেটভিত্তিক একটি পত্রিকার সম্পাদক ও পরিচালক। ইউরোপের কৃষ্ণাঙ্গ ও আফ্রিকানদের বিষয়ে ফরাসি ভাষায় নানা তথ্য ও বক্তব্য প্রচার করা হয় তার এই পত্রিকায়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন:
“কিভাবে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছি তা আমি বলতে পারব না। তবে অবশ্যই বলতে হবে যে আমি নিজে নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি বরং মহান আল্লাহই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন। তিনিই আমাকে অনুগ্রহ করেছেন, আমাকে বেছে নিয়েছেন ও গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহই তাঁর পথ-নির্দেশনার মাধ্যমে আমাকে সঠিক পথে এনেছেন।”
রজার বুনগুস মনে করেন ইউরোপে ইসলামের দিকে আগ্রহ নজিরবিহীন পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেছেন:
“আমি নিজেই ইসলামের প্রতি নজিরবিহীন আকর্ষণের দৃষ্টান্ত। পাশ্চাত্যে সত্যিকার অর্থেই ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। পাশ্চাত্য যে ইসলাম-আতঙ্কে ভুগছে তা অকাট্য সত্য এবং ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। আর এ জন্যই মানুষ জানতে চাচ্ছে ইসলাম কেমন ধর্ম এবং এই ধর্মের বক্তব্যই বা কী যে এর বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য এতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ও এর বিরুদ্ধে এত ব্যাপক প্রচারণা চলছে?”
রজার বুনগুস আরো বলেছেন:
“ইসলামের বিরুদ্ধে এত প্রচারণা ও আতঙ্ক ছড়ানোর কারণেই ইউরোপের জনগণ ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও গবেষণা করতে আগ্রহী হচ্ছে। আর এ ধরনের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তাদের বেশিরভাগই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। আমার নিজের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটেছে এবং ইউরোপ-আমেরিকার অনেক নও-মুসলিম এভাবেই মুসলমান হয়েছেন। আমি যখন একজন সাংবাদিক হিসেবে ইসলামের বিরুদ্ধে এত ব্যাপক প্রচারণা চলতে দেখলাম তখনই এ ধর্ম সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ বেড়ে যায় এবং পড়াশুনা ও গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মানুষের মধ্যে উন্নত নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূল এসেছেন। আর উন্নত নৈতিক গুণ বিকাশের লক্ষ্য হল মানুষকে পূর্ণতা অর্জনের পথে এগিয়ে নেয়া। বিশ্বনবী (সা.) মূলত আল্লাহর সহায়তায় উন্নত নৈতিক গুণ দেখিয়েই মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। তাঁর সুমহান চরিত্রের মধ্যে এমনসব উচ্চতর মানবীয় গুণ ও চারিত্রিক সুষমা ছিল যে কঠোর শত্রুরাও এর মাধ্যমে প্রভাবিত হত। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষের সুমহান চরিত্র ও গুণগুলোকে পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্যই আমার আবির্ভাব ঘটেছে।
নও-মুসলিম রজার বুনগুসও ইসলামের অনন্য চারিত্রিক বা নৈতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ এবং অভিভূত। তিনি বলেছেন:
“পশ্চিমে নৈতিকতাহীনতা ব্যাপক প্রচলিত বিষয়। কিন্তু ইসলাম একে মেনে নেয় না। ইসলাম নৈতিকতার প্রচলন করছে। আর ইসলাম ধর্মই হল এই নৈতিকতা। পশ্চিমা জনগণ হাড়ে হাড়ে এর শূন্যতা অনুভব করছে। কিন্তু ইসলাম নৈতিক চরিত্রের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করায় তারা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা ইসলামের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও আত্মিক চাহিদার সমাধান পাচ্ছে। আমার মতে ইসলামের ব্যাপক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান কারণই ছিল মানুষের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.)’র অনুপম আচার-আচরণ, ব্যবহার ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় নৈতিক চরিত্র। ইসলাম কখনও বৈষম্য ও আধিপত্যকামিতা মেনে নেয় না। রাসূল (সা.) দাস বা গোলামদের মুক্তি দিতেন। অথচ আজ পাশ্চাত্যে নতুন ধরনের দাস-প্রথা চালু হয়েছে এবং এ প্রথাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।”
মার্কিন সরকার গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সমর্থক বলে দাবি করে আসলেও বাস্তবে এসবকে গুরুত্ব দেয় না, বরং এসব বিষয়কে স্বার্থ হাসিলের অজুহাত হিসেবেই ব্যবহার করে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলমানদের মানবাধিকার ব্যাপক মাত্রায় পদদলিত করা হচ্ছে। এটা খুবই স্পষ্ট। পশ্চিমা সরকারগুলো ইসলামের আলোকোজ্জ্বল চেহারাকে বিকৃতভাবে তুলে ধরছে। বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তারা ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষী ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফরাসি নও-মুসলিম রজার বুনগুস বলেছেন:
“পাশ্চাত্য হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির মত যার এক হাতে রয়েছে মদভরা পাত্র। এটা তাদের ব্যবসার আসল পণ্য। এর মাধ্যমে তারা আমোদ-ফুর্তি ও অনাচারে লিপ্ত হয়। আর এ জন্যই নৈতিকতার ধর্ম ইসলামকে তারা এত ভয় পায় ও এ ধর্মের বিরোধিতা করছে এবং এ ধর্মকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। কারণ, ইসলাম অনাচার ও ব্যভিচারের কঠোর বিরোধী। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মুসলমানদের বাস্তব অবস্থার ঠিক বিপরীত চিত্রই তুলে ধরছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো।”
নও-মুসলিম রজার বুনগুস আরো বলেছেন:
আমি বেশ সাহস নিয়ে বলতে পারি পাশ্চাত্যে ও ফ্রান্সে মুসলমানদের বেশির ভাগই প্রতিভাবান। এটা অনস্বীকার্য একটি বিষয় এবং এর ফলে পাশ্চাত্যে সামাজিক পাল্লা মুসলমানদের দিকেই ভারী হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো বিষয়টিকে উল্টো করে দেখাচ্ছে। তারা ইউরোপের মুসলমানদের বর্বর ও হিংস্র বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একইভাবে তারা ইরানের নারী সমাজের অবস্থানকেও খাটো করে দেখাতে চায়। এইসব মিডিয়া বলছে, ইরানের নারী কাজ করে না, চাকরিতে তাদের স্থান নেই এবং সমাজে তারা সক্রিয় নয়। তারা কেবলই রান্নাঘরের কর্মী। অথচ ইরানের নারীর অবস্থা কথিত এ অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইত (আ.) মানুষকে প্রকৃত সৌভাগ্য, শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার দিকে আহ্বান জানিয়ে গেছেন। অথচ পাশ্চাত্য ইসলামের ইতিহাসের এই অত্যুজ্জ্বল তারকাদের ব্যাপারেও বিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে নও-মুসলিম রুজে বুনগুস বলেছেন:
পাশ্চাত্য আহলে বাইত (আ.)’র ইসলাম বা প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অধিকারী নয়। সেখানে ইসলাম সম্পর্কে যা বলা হয় তা ওয়াহাবীদের পক্ষ থেকেই প্রচার করা হয়। আর এসব তথ্যই প্রতিফলিত হয় পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমে। আহলে বাইত (আ.)’র ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে খ্রিস্টানরাও। অবশ্য মূল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে ওয়াহাবীরা ও উগ্রপন্থী বিচ্যুতরা। ওয়াহাবীরা শিয়াদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারকেই তাদের টিকে থাকার মাধ্যম বলে মনে করে। অথচ বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইত (আ.) শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। এ ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনি আহলে বাইত (আ.)’র মর্যাদা এবং পরস্পরের পবিত্রতার বিষয়ে প্রকৃত শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কখনও বিতর্ক বা বিবাদ হতে দেখবেন না। এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ফতোয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। আমি এই ফতোয়া শুনে খুবই আনন্দিত হয়েছি। এই ফতোয়া ইসলামের প্রকৃত চেহারা ও বিশেষ করে শিয়া মুসলমানদের প্রকৃত চেহারা সুস্পষ্ট করেছে এবং এর ফলে উগ্রবাদীদের বা চরমপন্থীদের ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যাপক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ফরাসিরা ব্যাপক হারে ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে। সেখানে ইসলাম দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে ও ফ্রান্সে ইসলামের প্রতি আকর্ষণে কোনো ভাটা বা কমতি দেখা যায়নি।
By bn • মুস্তাবসের হওয়ার গল্প 0 • Tags: আফ্রিকা, আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, কল্যাণ, চরিত্র, বিধান, মানুষ, শান্তি, সত্য