ইসলামই পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জনের পথ: জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন

ইসলামই পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জনের পথ: জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন
ইসলামই পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জনের পথ: জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন

প্রকৃত ধর্ম তথা ইসলাম পবিত্রতা ও নিরাপত্তার ধর্ম। এ ধর্ম মানব প্রকৃতির ধর্ম। তাই জাতি, বর্ণ, ভাষা ও ভৌগোলিক সীমারেখার উর্ধ্বে এ ধর্মের রয়েছে সার্বজনীন আবেদন।

ইসলাম চিন্তাশীলতা, বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তি বা বিবেকের ধর্ম। ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী জন ডেভেনপোর্টের মত অনেক অমুসলিম মনীষীও ইসলাম ধর্মের সুদৃঢ় বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি বা যৌক্তিকতা, মানব-প্রেম ও সভ্যতা নির্মাণকারী সামাজিক নানা বৈশিষ্ট্য দেখে অভিভূত হয়েছেন।

জার্মানের নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন পবিত্র কুরআনের আয়াত সম্পর্কে বলেছেন, “কুরআন আমার কাছে এক অন্তহীন আকর্ষণ ও উপভোগ্য বই। আমার ওপর এর প্রভাব শুষ্ক মরুভূমির ওপর বৃষ্টি বর্ষণের মত।”

জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন জন্ম নিয়েছেন উত্তর-পশ্চিম জার্মানিতে। যৌবনেই তার মধ্যে এ উপলব্ধি জন্মে যে পাশ্চাত্যের বিরাজমান পরিস্থিতি ও পরিবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“পাশ্চাত্যে মানবিক মূল্যবোধ ও দয়ামায়ার অভাব আমি তীব্রভাবে অনুভব করতাম। এ অবস্থা আমাকে গভীরভাবে পীড়া দিচ্ছিল। ঘটনাক্রমে একদিন রেডিওর স্টেশন ঘুরাতে ঘুরাতে থামলাম এমন এক জায়গায় যেখানে কেউ একজন জার্মান ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে কথা বলছিলেন। তার কথাগুলো আমার কাছে অভিনব মনে হচ্ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম অভিনব সব কথা। ওই অনুষ্ঠান শেষ হলে বুঝলাম আমি রেডিও তেহরানের জার্মান ভাষার অনুষ্ঠান শুনছিলাম। এরপরই ওই অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতায় পরিণত হই এবং ইসলাম সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য জানতে পারলাম। এভাবেই ইসলাম সম্পর্কে আমার গবেষণার সূত্রপাত ঘটেছিল। কুরআন নিয়েই শুরু করলাম বিস্তারিত গবেষণা। কয়েকটি সুরার অনুবাদ পড়ার পর এ মহাগ্রন্থের সঙ্গ ত্যাগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। আমি ইরানের জার্মান ভাষার রেডিওতে চিঠি লেখা শুরু করলাম এবং এই রেডিওর কর্মকর্তাদের নানা সহযোগিতা পেতে লাগলাম। এই রেডিওর মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লব ও ইমাম খোমেনী (র.) সম্পর্কেও জানতে পারলাম। শহীদ আয়াতুল্লাহ মোতাহহারীর লেখা কিছু বই পড়লাম ও তার বক্তব্যের রেকর্ড শুনলাম। মোতাহহারী ইসলামের ব্যাপক খেদমত করেছেন।”

জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন আরো বলেছেন : “আমি যেভাবেই সম্ভব ইসলাম সম্পর্কে সার্বিক ধারণা অর্জনের চেষ্টা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত এই ধারণা অর্জন করলাম যে, ইসলাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্মটি দিনকে দিন শক্তিশালী হচ্ছে ও ছড়িয়ে পড়ছে। আমার মতে, ইসলামই পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জনের পথ। ইসলাম যেসব বিধান বা দায়িত্ব পালনের কথা বলে সেসবের রয়েছে দর্শন ও অর্থ। যেমন, নামাজ মানুষকে পাপ ও লাগামহীনতা থেকে রক্ষা করে এবং মানুষের মনকেও করে পরিষ্কার ঠিক যেভাবে পানির ঝর্ণা দূর করে কাদা ও পঙ্কিলতা। ইসলামের অন্য ইবাদতগুলোও গভীর অর্থপূর্ণ।

জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন আরো বলেছেন : “স্বাধীনতা সম্পর্কে পাশ্চাত্য ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইসলাম কিছু বিধিবিধানের আওতায় মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে এসেছে, আল্লাহ যেসব সীমা নির্ধারণ করেছেন তা অতিক্রম করো না। কিন্তু পাশ্চাত্যে স্বাধীনতার নামে ভালোকে মন্দ ও মন্দকে ভালো বলা হয়। পাশ্চাত্যে স্বাধীনতার অর্থ অনুযায়ী মানুষের প্রবৃত্তিই তার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাশ্চাত্যে স্বাধীনতাকে সবাই নিজ স্বার্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে। কথিত রেনেসাঁর সময় পাশ্চাত্যে খোদাকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয় এবং খোদার পরিবর্তে মানুষের ওপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আর এর ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ। পরিবার ব্যবস্থায় নেমেছে ধস। ব্যভিচার, অনাচার, স্বার্থপরতা ও নানা অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে পাশ্চাত্যে। যারা মনে করেন পাশ্চাত্য স্বর্গরাজ্য তারা ভুল করছেন। এখানকার পরিবেশ মানুষের ঈমানের জন্য বড় ধরনের হুমকি। তাই আমার মতে, পশ্চিমা আদর্শ মানুষের জন্য উপযুক্ত জীবনাদর্শ হতে পারে না।”

জার্মান নও-মুসলিম ইঙ্গু ইয়ানসেন মুসলমান হওয়ার পর নিজের জন্য হুসাইন নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি মুসলমানদের প্রতি উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন : পাশ্চাত্য ইসলামকে বিপজ্জনক বলে তুলে ধরছে। অথচ এটা সত্য নয়। একজন খাঁটি মুসলমানকে জ্ঞান ও খোদাভীতির দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো অশ্লীলতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই মুসলমানদেরকে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ইসলামী নীতিমালার ওপর অবিচল থাকতে হবে। আমার দৃষ্টিতে, বর্তমান বিশ্বে ইরানের ইসলামী বিপ্লব খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনা। এর দিকে সবারই গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমরা এখন সারা বিশ্বে এ বিপ্লবের সুফল দেখতে পাচ্ছি।”

জার্মান নও-মুসলিম হুসাইন বা সাবেক ইঙ্গু ইয়ানসেন আরো বলছেন, “আমি মনে করি ইমাম খোমেনী (র.) ছিলেন এ যুগের মুজাদ্দিদ বা সংস্কার। তিনি রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকেই এ যুগের নজিরবিহীন ব্যক্তিত্ব। পাশ্চাত্য বলেছিল, এ বিপ্লব কেবল কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস টিকবে। কিন্তু এ বিপ্লবের প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি বলব, তারা অচলাবস্থার শিকার হয়েছে। কারণ, আমরা দেখছি বিশ্বব্যাপী ইসলামের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আমি অবশ্যই এটা বলব যে, খোদা ও খোদায়ী মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পাশ্চাত্যের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।”