“আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে- যদি তারা দুধ পান করানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অভিভাবক বা পিতার কর্তব্য হলো যথাবীধি তাদের (সন্তানের মায়ের) ভরণ-পোষণ করানো। কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেয়া হবে না। (মতবিরোধের কারণে) সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অধিকার পিতা বা মাতার নেই। আর (সন্তানের পিতা অবর্তমান থাকলে) উত্তরাধিকারীদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তাবে। আর যদি পিতা-মাতা পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে দু’বছরের আগেই দুধ ছাড়িয়ে দিতে চায়,তাতে তাদের কোন পাপ নেই,যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও,তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে,আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন।” (২:২৩৩)
পরিবার হলো প্রতিটি সমাজের স্তম্ভ। এই ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়লে সমাজে সংকট দেখা দেবে। আগের আয়াতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পর্কে বলার পর এই আয়াতে তালাকের পর সন্তানের প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই আয়াতে মাতৃস্নেহের গুরুত্ব বিচার করে ও শিশুর জন্য মায়ের দুধের প্রয়োজনের আলোকে শিশুকে দু’বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে । এমনকি মা যদি সন্তানের বাবা থেকে বিচ্ছিন্নও হয় কিংবা সন্তানের পিতার মৃত্যু ঘটে তবুও মাকে সন্তানের এই অধিকার পূরণ করতে হবে। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ার জন্য সন্তানের দৈহিক ও মানসিক ক্ষতি করা যাবে না। অবশ্য সন্তান ও সন্তানের মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করা সন্তানের পিতার দায়িত্ব এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে এমন কোন কাজ করার অধিকার সন্তানের পিতার নেই ।
এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তার সারসংক্ষেপ হলো-
প্রথমতঃ শিশুদের অধিকার রক্ষা করা পিতা-মাতার জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব। শিশুদেরকে তাদের পিতা-মাতার বিচ্ছেদের নেতিবাচক পরিণতির শিকার হতে দেয়া যাবে না ।
দ্বিতীয়ত : ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব স্বামীর এবং পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাতে স্ত্রী বাধ্য নয় ।
“তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায় তাদের স্ত্রীদেরকে চারমাস ১০দিন অপেক্ষা করতে হবে। ইদ্দত বা এই নির্ধারিত সময় শেষ হবার পর তারা বিধিমত নিজেদের জন্য কোন কাজ করলে (বিবাহ করলে) তাতে তোমাদের (অভিভাবকদের) কোন পাপ হবে না । তোমরা যা কর,আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” (২:২৩৪)
তালাক ছাড়া অন্য যে কারণে স্ত্রীকে দুঃখজনকভাবে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় তা হলো স্বামীর মৃত্যু। স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীর কী করণীয় তা এই আয়াতে বলা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের মধ্যে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে নানা প্রথার প্রচলন ছিল। অনেকের বিশ্বাস স্ত্রীকেও স্বামীর মৃত্যুর পর মরতে হবে এবং এ জন্য স্বামীর সাথে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো,এখনো কোন কোন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। আবার কোন কোন ধর্ম স্ত্রীর পুনর্বিবাহকে নিষিদ্ধ করেছে। আবার অনেকে স্বামীর মৃত্যুর পর পরই বিধবা স্ত্রীর পুনর্বিবাহকে বৈধ বলে মনে করেন। এই সব চরম পন্থা ও বাড়াবাড়ির বিপরীতে ইসলাম মৃত স্বামীর মর্যাদা রক্ষা এবং বিধবা স্ত্রী গর্ভবতী কিনা তা স্পষ্ট করার জন্য অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে । কিন্তু এই সময় পেরিয়ে যাবার পর বিধবাকে নিজ পছন্দমত বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে,এমনকি এক্ষেত্রে অন্যদের মতামত গ্রাহ্য করা তার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
“আর তোমরা যদি আভাসে-ইঙ্গিতে উক্ত রমণীদেরকে বিয়ের প্রস্তাব কর অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ,তাতে তোমাদের দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথা-বার্তা ছাড়া গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না,নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না। জেনে রাখ,নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল সহিষ্ণু।” (২:২৩৫)
আগের আয়াতে বলা হয়েছিল স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীরা নিজেদের পছন্দমত যে কোন স্বামী গ্রহণ করতে পারে। এই আয়াতে বলা হয়েছে- যদিও ইদ্দতকালীন সময়ে বিধবা স্ত্রীদেরকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই,কিন্তু রুচি সম্মত ও পরিবেশ সম্মতভাবে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। কারণ স্বামী হারানোর কারণে তারা শোক-সন্তপ্ত রয়েছে।
এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তাহলো-
প্রথমত: ইসলাম বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। আর প্রত্যেক মানুষই স্বভাবগতভাবে বিয়ে করতে আগ্রহী। ইসলাম এই চাহিদার বিরোধীতা করে না। বরং নারী ও পুরুষের জন্য এর বৈধ ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে ।
দ্বিতীয়ত : বিয়ের আগে বিয়ের জন্য গোপন চুক্তি বা ওয়াদা করা এবং বিধবা স্ত্রীদের সঙ্গে অনুপযোগী আচরণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
এরপরের দুই আয়াত অর্থাৎ ২৩৬ ও ২৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
“যদি তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে স্পর্শ না করে অথবা তাদের মোহরানা বা প্রাপ্য নির্ধারণ না করে তালাক দাও,তবে তোমাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমরা তাদের সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। বিত্তবান তার সাধ্যমত ও বিত্তহীন তার সামর্থ অনুযায়ী বিধিমত সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আর এটাই ন্যায়পরায়ন লোকের কর্তব্য।” (২:২৩৬)
“তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই তালাক দাও,অথচ মোহরানা ধার্য করে থাকো,তবে যা তোমরা ধার্য করেছ তার অর্ধেক তাদেরকে দিতে পার। যদি না স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহ-বন্ধন রয়েছে সে মাফ করে দেয় এবং মাফ করে দেয়াই আত্মসংযমের নিকটতর। তোমরা পরষ্পরের মধ্যে উদারতার কথা ভুলে যেওনা। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। ” (২:২৩৭)
এই দুই আয়াতে তালাকের সময় স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে,বিয়ের মূল চুক্তিতে দেন মোহর ধার্য না করা হলেও নিজের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী স্ত্রীকে অর্থ দিয়ে বিচ্ছেদের তিক্ততা কিছুটা দূর করতে হবে। আর এটা হলো সৎকর্মশীলতার পরিচয়। আর যেক্ষেত্রে মোহরানা নির্ধারিত রয়েছে ও স্ত্রীকে স্পর্শ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে এমনকি একদিন স্পর্শ করা হলেও পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে। স্ত্রীকে স্পর্শ না করা হলেও পূর্ণ মোহরানা দেয়া উত্তম ও মহত্বের নিদর্শন। আর পুরোপুরি সম্ভব না হলে অর্ধেক পরিমাণ মোহরানা দিতে হবে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে পুরো অংশ বা আংশিক পরিমাণে মোহরানা মাফ করে দিতে পারে।
এই দুই আয়াতের শিক্ষা হলো- তালাকের সময়ও স্বামী-স্ত্রীকে মানবিক ও নৈতিক বিষয়কে মনে রাখবে। অবশ্য পালনীয় অধিকার রক্ষা করা ছাড়াও উভয়পক্ষকে বিদ্বেষ ও রুক্ষতার পরিবর্তে একে অপরের প্রতি উদার ও ক্ষমাশীল হতে হবে।
জানু. 15 2024
সূরা বাকারাহ;(৫৯তম পর্ব)
সূরা বাকারাহ’র ২৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَهُ بِوَلَدِهِ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَلِكَ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا وَإِنْ أَرَدْتُمْ أَنْ تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُمْ مَا آَتَيْتُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে- যদি তারা দুধ পান করানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অভিভাবক বা পিতার কর্তব্য হলো যথাবীধি তাদের (সন্তানের মায়ের) ভরণ-পোষণ করানো। কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেয়া হবে না। (মতবিরোধের কারণে) সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অধিকার পিতা বা মাতার নেই। আর (সন্তানের পিতা অবর্তমান থাকলে) উত্তরাধিকারীদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তাবে। আর যদি পিতা-মাতা পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে দু’বছরের আগেই দুধ ছাড়িয়ে দিতে চায়,তাতে তাদের কোন পাপ নেই,যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও,তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে,আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন।” (২:২৩৩)
পরিবার হলো প্রতিটি সমাজের স্তম্ভ। এই ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়লে সমাজে সংকট দেখা দেবে। আগের আয়াতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পর্কে বলার পর এই আয়াতে তালাকের পর সন্তানের প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই আয়াতে মাতৃস্নেহের গুরুত্ব বিচার করে ও শিশুর জন্য মায়ের দুধের প্রয়োজনের আলোকে শিশুকে দু’বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে । এমনকি মা যদি সন্তানের বাবা থেকে বিচ্ছিন্নও হয় কিংবা সন্তানের পিতার মৃত্যু ঘটে তবুও মাকে সন্তানের এই অধিকার পূরণ করতে হবে। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ার জন্য সন্তানের দৈহিক ও মানসিক ক্ষতি করা যাবে না। অবশ্য সন্তান ও সন্তানের মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করা সন্তানের পিতার দায়িত্ব এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে এমন কোন কাজ করার অধিকার সন্তানের পিতার নেই ।
এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তার সারসংক্ষেপ হলো-
প্রথমতঃ শিশুদের অধিকার রক্ষা করা পিতা-মাতার জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব। শিশুদেরকে তাদের পিতা-মাতার বিচ্ছেদের নেতিবাচক পরিণতির শিকার হতে দেয়া যাবে না ।
দ্বিতীয়ত : ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব স্বামীর এবং পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাতে স্ত্রী বাধ্য নয় ।
এরপর ২৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
“তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায় তাদের স্ত্রীদেরকে চারমাস ১০দিন অপেক্ষা করতে হবে। ইদ্দত বা এই নির্ধারিত সময় শেষ হবার পর তারা বিধিমত নিজেদের জন্য কোন কাজ করলে (বিবাহ করলে) তাতে তোমাদের (অভিভাবকদের) কোন পাপ হবে না । তোমরা যা কর,আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” (২:২৩৪)
তালাক ছাড়া অন্য যে কারণে স্ত্রীকে দুঃখজনকভাবে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় তা হলো স্বামীর মৃত্যু। স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীর কী করণীয় তা এই আয়াতে বলা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের মধ্যে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে নানা প্রথার প্রচলন ছিল। অনেকের বিশ্বাস স্ত্রীকেও স্বামীর মৃত্যুর পর মরতে হবে এবং এ জন্য স্বামীর সাথে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো,এখনো কোন কোন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। আবার কোন কোন ধর্ম স্ত্রীর পুনর্বিবাহকে নিষিদ্ধ করেছে। আবার অনেকে স্বামীর মৃত্যুর পর পরই বিধবা স্ত্রীর পুনর্বিবাহকে বৈধ বলে মনে করেন। এই সব চরম পন্থা ও বাড়াবাড়ির বিপরীতে ইসলাম মৃত স্বামীর মর্যাদা রক্ষা এবং বিধবা স্ত্রী গর্ভবতী কিনা তা স্পষ্ট করার জন্য অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে । কিন্তু এই সময় পেরিয়ে যাবার পর বিধবাকে নিজ পছন্দমত বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে,এমনকি এক্ষেত্রে অন্যদের মতামত গ্রাহ্য করা তার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
এই সূরার ২৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنْتُمْ فِي أَنْفُسِكُمْ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَكِنْ لَا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَنْ تَقُولُوا قَوْلًا مَعْرُوفًا وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّى يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
“আর তোমরা যদি আভাসে-ইঙ্গিতে উক্ত রমণীদেরকে বিয়ের প্রস্তাব কর অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ,তাতে তোমাদের দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথা-বার্তা ছাড়া গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না,নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না। জেনে রাখ,নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল সহিষ্ণু।” (২:২৩৫)
আগের আয়াতে বলা হয়েছিল স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীরা নিজেদের পছন্দমত যে কোন স্বামী গ্রহণ করতে পারে। এই আয়াতে বলা হয়েছে- যদিও ইদ্দতকালীন সময়ে বিধবা স্ত্রীদেরকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই,কিন্তু রুচি সম্মত ও পরিবেশ সম্মতভাবে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। কারণ স্বামী হারানোর কারণে তারা শোক-সন্তপ্ত রয়েছে।
এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তাহলো-
প্রথমত: ইসলাম বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। আর প্রত্যেক মানুষই স্বভাবগতভাবে বিয়ে করতে আগ্রহী। ইসলাম এই চাহিদার বিরোধীতা করে না। বরং নারী ও পুরুষের জন্য এর বৈধ ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে ।
দ্বিতীয়ত : বিয়ের আগে বিয়ের জন্য গোপন চুক্তি বা ওয়াদা করা এবং বিধবা স্ত্রীদের সঙ্গে অনুপযোগী আচরণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
এরপরের দুই আয়াত অর্থাৎ ২৩৬ ও ২৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
لَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ (২৩৮) وَإِنْ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَنْ يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَأَنْ تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَلَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“যদি তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে স্পর্শ না করে অথবা তাদের মোহরানা বা প্রাপ্য নির্ধারণ না করে তালাক দাও,তবে তোমাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমরা তাদের সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। বিত্তবান তার সাধ্যমত ও বিত্তহীন তার সামর্থ অনুযায়ী বিধিমত সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আর এটাই ন্যায়পরায়ন লোকের কর্তব্য।” (২:২৩৬)
“তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই তালাক দাও,অথচ মোহরানা ধার্য করে থাকো,তবে যা তোমরা ধার্য করেছ তার অর্ধেক তাদেরকে দিতে পার। যদি না স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহ-বন্ধন রয়েছে সে মাফ করে দেয় এবং মাফ করে দেয়াই আত্মসংযমের নিকটতর। তোমরা পরষ্পরের মধ্যে উদারতার কথা ভুলে যেওনা। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। ” (২:২৩৭)
এই দুই আয়াতে তালাকের সময় স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে,বিয়ের মূল চুক্তিতে দেন মোহর ধার্য না করা হলেও নিজের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী স্ত্রীকে অর্থ দিয়ে বিচ্ছেদের তিক্ততা কিছুটা দূর করতে হবে। আর এটা হলো সৎকর্মশীলতার পরিচয়। আর যেক্ষেত্রে মোহরানা নির্ধারিত রয়েছে ও স্ত্রীকে স্পর্শ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে এমনকি একদিন স্পর্শ করা হলেও পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে। স্ত্রীকে স্পর্শ না করা হলেও পূর্ণ মোহরানা দেয়া উত্তম ও মহত্বের নিদর্শন। আর পুরোপুরি সম্ভব না হলে অর্ধেক পরিমাণ মোহরানা দিতে হবে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে পুরো অংশ বা আংশিক পরিমাণে মোহরানা মাফ করে দিতে পারে।
এই দুই আয়াতের শিক্ষা হলো- তালাকের সময়ও স্বামী-স্ত্রীকে মানবিক ও নৈতিক বিষয়কে মনে রাখবে। অবশ্য পালনীয় অধিকার রক্ষা করা ছাড়াও উভয়পক্ষকে বিদ্বেষ ও রুক্ষতার পরিবর্তে একে অপরের প্রতি উদার ও ক্ষমাশীল হতে হবে।
By bn • একেশ্বরবাদীদের মধ্যে ঐক্য 0 • Tags: অভিভাবক, আল্লাহ, ইসলাম, গোপন, তালাক, দুধ, দোষ, ধর্ম, নারী, ন্যায়পরায়ন, পিতা, বিজ্ঞান, বিধবা, সূরা, স্বামী